ইন্টারনেট
হোম / প্রবাস / বিস্তারিত
ADS

ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘স্থাপত্যে স্বাতন্ত্র্য’ শীর্ষক প্রদর্শনী শুরু

19 October 2023, 6:12:23

বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা হয়ে ওঠা ব্র্যাকের প্রথম প্রজন্মের অফিসগুলো নির্মিত হয়েছিল সত্তর থেকে আশির দশকে। আবার এর অনেকগুলোই স্থাপিত হয়েছিল ভাড়া নেওয়া বাড়িতে। প্রান্তিক পর্যায়ে অনেক স্থানে আধপাকা ভবনেও ব্র্যাকের কার্যক্রম চালানো হয়েছে। সেসব ভবনে পর্যাপ্ত স্থান সংকুলানের অভাব ছিল। বিভিন্ন কর্মসূচি পরিচালনার ক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের সেবা দেওয়ার কাজে সমস্যা দেখা দিতো। সবমিলিয়ে এসব স্থাপনার স্বকীয় কোনো স্থাপত্য-বৈশিষ্ট্য ছিল না।

২০১৭ সালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে ৮টি আঞ্চলিক কার্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় ব্র্যাক। নকশা করার দায়িত্ব আসে ব্র্যাকেরই নামানুসারে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের ওপর। সেসময় স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারপারসন ও সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের (সিআইএইউ) নির্বাহী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ। তাঁর নেতৃত্বে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষক ও সিআইএইউ-এর একদল তরুণ স্থপতির অংশগ্রহণে নকশার কাজ সম্পন্ন হয়। এক এক করে তৈরি হয় ভবনগুলো। প্রথম থেকেই তাঁদের ভাবনা ছিল, এসব কার্যালয়ে সেবা নিতে আসা তৃণমূলের মানুষ যেন কোনোপ্রকার হীনমন্যতায় না ভোগেন। বরং স্থাপত্যের ধরন যেন তাদের মধ্যে একধরনের আশাবাদ কিংবা স্বাতন্ত্রের অনুভূতি জাগ্রত করে, যাতে করে তারাও নিজেদেরকে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অংশীদার বলে মনে করেন।

দেশের বিভিন্ন স্থানে নির্মিত ব্র্যাকের নতুন প্রজন্মের এমন ৮টি আঞ্চলিক কার্যালয়ের মধ্য থেকে বাছাই করা ৫টির স্থাপত্যশৈলী নিয়ে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে ‘আর্কিটেকচার অ্যাজ ফ্রিডম’ বা ‘স্থাপত্যে স্বাতন্ত্র্য’ শীর্ষক এক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে।

বুধবার (১৮ অক্টোবর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় ওয়াশিংটন ডিসির ডিস্ট্রিক্ট আর্কিটেকচার সেন্টারে এই প্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়। ব্র্যাক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ও সেন্টার ফর ইনক্লুসিভ আর্কিটেকচার অ্যান্ড আরবানিজমের এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকা যৌথভাবে প্রদর্শনীটি আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে স্থাপত্য প্রকল্পগুলোর বিশদ বিবরণসহ একটি বইও প্রকাশ করা হয়েছে।

উদ্বোধনী আয়োজনে স্বাগত বক্তব্য দেন ডিস্ট্রিক্ট আর্কিটেকচার সেন্টারের ডিরেক্টর ম্যারি ফিচ। কিউরেটর হিসেবে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ। এছাড়া অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পিটার কিলপ্যাট্রিক, যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম মোরান, সাবেক রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা, স্যার ফজলে হাসান আবেদের জীবনী নিয়ে লেখা বই ‘হোপ ওভার ফেইট’-এর লেখক স্কট ম্যাকমিলান, সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর মাইকেল কুগেলম্যান, দ্য ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অব আমেরিকার স্থাপত্য বিভাগের ডিন মার্ক ফার্গুসন এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যের অধ্যাপক জুলিও বারমুডেজ।

এর আগে স্থাপত্য প্রকল্পগুলো নিয়ে ৭ মিনিটের একটি ভিডিওক্লিপ দেখানো হয়। প্রদর্শনী ঘুরে দেখার পর অতিথিরা বলেন, ‘আদনান মোর্শেদ ও তাঁর সহকর্মীদের স্থাপত্যকর্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ব্র্যাক সম্পর্কে অনেককিছু জানার সুযোগ হলো। বাংলাদেশের তৃণমূল চিরায়ত স্থাপনার সংস্কৃতি অনুসরণ করে স্থাপনা নির্মাণের দারুণ একটি উদাহরণ এখানে তুলে ধরা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে স্থাপত্য পড়াশোনা করা শিক্ষার্থীরাও এর থেকে নতুন কিছু খুঁজে পাবে।’

প্রদর্শনীর কিউরেটর স্থপতি অধ্যাপক ড. আদনান জিল্লুর মোর্শেদ বলেন, ‘নকশা করার আগে, একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাকের দর্শন কেমন— সেটা বোঝা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। শুরু থেকেই স্যার ফজলে হাসান আবেদ প্রাতিষ্ঠানিকরণের দিকে জোর দিয়েছেন যাতে ব্র্যাক কোনো ব্যক্তিনির্ভর সংগঠন না হয়। তিনি ভাবতেন, গরীব মানুষকে ক্ষুদ্রঋণ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ও প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠার রাস্তা দিতে হবে; আর যেকোনো কাজে দক্ষতা অর্জন করলেই তারা তাদের জীবন বদলাতে পারবে। ব্র্যাকের আঞ্চলিক কার্যাগুলোর নকশা করার ক্ষেত্রে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই বিষয়গুলোকে স্থাপত্যের ভাষায় রূপান্তর করা।’

অধ্যাপক আদনান আরও বলেন, ‘চারটি দর্শনের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আমরা এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এর একটি হলো উন্নয়নের সঙ্গে স্থানের সম্পর্ককে নিবিড়ভাবে বোঝা। দ্বিতীয়ত, স্বাতন্ত্র্যকে স্থানিক রূপ দেওয়া, কিংবা ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে স্থাপত্যের মাধ্যমে উজ্জীবিত করা। তৃতীয় দর্শন ছিল, সীমিত পরিমাণে স্থানীয় সম্পদ ব্যবহার করে বড় আকারে ইতিবাচক ও কল্যাণমুখী প্রভাব তৈরি করা, যেটি স্থাপত্য প্রকল্পের ব্যবহারকারীদের আচরণেও প্রভাব ফেলবে। চতুর্থত, দ্রুত পরিবর্তনশীল গ্রামীণ বাংলাদেশের পরিবেশের জন্য উপযোগী একটি টেকসই স্থাপনার নকশা করা। শহর বা নগর অঞ্চলের উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামেও পরিবর্তন ও বিবর্তন ঘটছে। কৃষিখাতের আধুনিকায়ন, উন্নত সড়ক যোগাযোগ, তথ্যপ্রযুক্তি, তরুণ উদ্যোক্তা ও উচ্চাকাঙ্খী শ্রেণির উত্থান দ্বারা চালিত এক নতুন গ্রামীণ সমাজ আমাদের সামনে প্রতীয়মান। সরকারের নীতিগত সহযোগিতা, বেসরকারি সংস্থার মাঠপর্যায়ের কার্যক্রম, এবং মানুষের উচ্চাশা, সবমিলিয়ে আমরা দেখতে পেলাম —নতুনধারার আধুনিক গ্রামীণ, কিন্তু ঐতিহ্যের প্রতিফলন আছে, এবং সাশ্রয়ী ও জলবায়ু-উপযোগী স্থাপনা সেখানে সবচেয়ে বেশি মানানসই হবে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা গ্রামীণ প্রকৃতি থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেছি। নদীমাতৃক ব-দ্বীপের বৈশিষ্ট্য, প্রাচীন দোচালা ঘর, এবং উঠোনে দাঁড়িয়ে থাকা গাছ, পাশাপাশি দিগন্তবিস্তৃত সবুজ ধানক্ষেত, কৃষকের কুড়েঘর, এগুলোই আমাদের মূল উপজীব্য ছিল। এই সকল বিষয় এক সুতোয় গেঁথে আমরা নতুন প্রজন্মের স্থাপত্য তৈরি করতে চেয়েছি। ব্র্যাকের আদর্শিক প্রতিফলন তুলে ধরার চেষ্টা যেমন এতে ছিল, তেমনি স্থাপনাটি যেন মানবিক হয় এবং দারিদ্রের বিপরীতে শক্তি যোগায়, সেই ধারণাই ছিল এর প্রতি পরতে পরতে।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিটি প্রকল্পে খুবই ছোট আকারের জমিতে ব্র্যাকের ১৪টি কর্মসূচির সেবা সন্নিবেশিত করা হয়েছে। প্রতিটি অফিস ডিজাইনে আলাদা করে পাবলিক, সেমি-পাবলিক ও প্রাইভেট জোন রাখা হয়েছে, সেবাগুলোর সুবিন্যাস এমনভাবে করা হয়েছে যেন তা ব্র্যাকের কর্মী ও সেবাগ্রহীতা উভয়ের জন্যই উপভোগ্য হয়। আর ভবনের মাঝে রাখা হয়েছে কোর্টইয়ার্ড বা উঠান, যা স্বাচ্ছন্দ্যে আলোবাতাস চলাচলের ব্যবস্থা তৈরি করেছে। আমরা স্থানীয় কাঁচামাল ব্যবহার করেছি এবং স্থানীয় শ্রমিক ও মিস্ত্রীরাই নির্মাণকাজ করেছেন।’

ওয়াশিংটন ডিসির ডিস্ট্রিক্ট আর্কিটেকচার সেন্টারে প্রদর্শনীটি চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এতে পোস্টারের মাধ্যমে ৫টি স্থাপনার নকশা ও বিভিন্ন খুঁটিনাটি দিক উপস্থাপনের পাশাপাশি মডেল প্রদর্শন করা হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও পেশাজীবীসহ সকলকেই এই প্রদর্শনী ঘুরে দেখার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন আয়োজকরা।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: