রোজায় আরেক দফায় বাড়লো পণ্যের দাম

16 April 2021, 4:13:44

রোজার শুরুতেই আরেক দফা পণ্যের দাম বাড়লো। বিশেষ করে দুধ, ডিম ও মাংসের দাম আবারও বেড়েছে। চালসহ অধিকাংশ পণ্যের দাম এমনিতেই রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। কঠোর লকডাউন চলায় বাজারে বেড়েই চলছে পণ্যের দাম। নতুন করে বেড়েছে আরও ডজনখানে পণ্যের দাম। এর মধ্যে অন্তত ১০ ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। আর সরকারের হিসাবেও দেখা যাচ্ছে, নতুন করে বেড়েছে অন্তত আটটি নিত্যপণ্যের দাম।

বাজারের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দুই মাস আগ থেকেই চাল, ডাল, ছোলা, বেসন, চিনি, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, মরিচ, আদা-রসুন, সব ধরনের মাংস, খেজুরের দাম বাড়ানো হয়েছে। সর্বশেষ রোজা শুরুতে সবজি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে বাজারে রীতিমতো ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।

শসা ও বেগুনসহ ১০ রকমের সবজির দাম বেড়েছে

রাজধানীর কাওরান বাজারসহ অধিকাংশ কাঁচা বাজারের খুচরা সবজি ব্যবসায়ীরা শসা ও বেগুন বিক্রি করছেন ১১০-১২০ টাকা কেজি দরে। দুই সপ্তাহ আগে এই দুটি পণ্যের দাম ছিল এর অর্ধেক। আর রোজার বাজারে নতুন করে বেড়েছে কাঁচা মরিচ ও শুকনো মরিচের দাম। ৫০ টাকা কেজির কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙে, ধুন্দুলের মতো সবজিও বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকা। অথচ গত সপ্তাহে এই সবজি গুলোর কেজি ছিল ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। টমেটোর দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, শুকনো মরিচের দাম বেড়েছে কেজিতে ৪০ টাকা। গত সপ্তাহের ১৮০ টাকা কেজি দেশি শুকনো মরিচ এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা। একইভাবে ২২০ টাকা কেজি আমদানি করা শুকনো মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা।

বাজারে ৩৮ টাকা কেজি দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়ে হয়েছে ৪০ টাকা। আর বোতলজাত ৫ লিটার সয়াবিনের দাম বাড়তে বাড়তে হয়েছে ৬৬০ টাকা। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬৩০-৬৫০ টাকা।

দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে, মুরগি, ডিম, আলু, দুধ, গুড়োদুধ, আদা। গত সপ্তাহের ২৮ টাকা হালি ডিম এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৩০-৩২ টাকা। ১৮ টাকা কেজি আলু ২ টাকা বেড়ে হয়েছে ২০ টাকা।

ক্রেতারা বলছেন, অসাধু চক্র রোজা ও লকডাউনের অজুহাতে মুরগি ও ডিমের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডিমের দাম হালিপ্রতি বেড়েছে পাঁচ টাকা। আর লেয়ার ও দেশি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত।

বাজারগুলোতে দেখা যায়, ব্রয়লার মুরগি ১৬০-১৬৫ টাকা কেজিতে কেনাবেচা হচ্ছে। গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১৫০-১৫৫ টাকা কেজিতে। আর রোজার আগে ১৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া লেয়ার মুরগি এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকা কেজি দরে। পাকিস্তানি কক মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৫০ টাকা কেজিতে।

মুরগির পাশাপাশি বাজারগুলোতে গরুর মাংস ৫৮০-৬০০ টাকা এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮৫০-৯০০ টাকা কেজিতে।

বেড়েছে মাছের দামও। ২০০ টাকার কেজির রুই মাছের দাম ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ২৫০-৩০০ টাকা কেজিতে। ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৯০০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া শিং মাছ ৬০০-৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

বাজারের তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের তুলনায় আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫০ টাকা। অর্থাৎ ৯০ টাকা কেজি আমদানি করা আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা। আর ১০০ টাকা কেজি দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা।

সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি’র হিসেবে গত এক সপ্তাহে আমদানি হওয়া আদার দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ।

নতুন করে এই সপ্তাহে চালের দাম না বাড়লেও চড়া দামের চাল নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে হতাশা কাটছে না। বিশেষ করে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে গরিবের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি দরে। অথচ গরিবের আয় সেই তুলনায় বাড়েনি।

অধিকাংশ পণ্যের দাম রয়েছে ক্রেতাদের নাগালের বাইরে

ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি কেজি ৪৬ টাকার নিচে কোনও চাল পাওয়া যায় না। রাজধানীর নয়াটোলা বাজারের চাল ব্যবসায়ী অলিউর রহমান বলছেন, বাজারে রোজার এই সপ্তাহে নতুন করে চালের দাম বাড়েনি বটে। কিন্তু গেল কয়েক মাস ধরে চালের দাম বাড়ছে। এ কারণে চাল কিনতে আসা ক্রেতাদের কাছ থেকে বিরূপ মন্তব্য শুনতে হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে রাজধানীর মগবাজার এলাকার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে রোজার মাসে সীমিত আয়ের মানুষদের ভোগান্তি বেড়ে গেছে। চালের দাম যেভাবে বেড়েছে সেইভাবে কারও বেতন বাড়েনি। সবজির দাম যেভাবে বেড়েছে, সেইভাবে কারও বেতন বাড়েনি। অন্যান্য পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, সেইভাবে মানুষের আয় বাড়েনি।

প্রসঙ্গত, রোজা ও ঈদকে সামনে রেখে বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির ঘটনা প্রতি বছরই ঘটে। আবার প্রতিবছরই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগও নেওয়া হয়। এর সুফল ক্রেতারা পান না। এ বছরও রোজার পণ্য যেমন- ছোলা, পেঁয়াজ, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চিনি ও খেজুরের দাম বেঁধে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। আবার রোজা ও বিধিনিষেধের মধ্যে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। খোলা হয়েছে বিশেষ মনিটরিং সেল। একইসঙ্গে সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকিও জোরদার করা হয়েছে। কিন্তু বাজারে ভোক্তাদের সেই সুফল মিলছে না।

এ প্রসঙ্গে কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘আমাদের জানা মতে, দেশে মজুত পরিস্থিতি ভালো। কিন্তু তারপরও যখন দাম বাড়ছে, তখন ধরে নিতে হবে অসাধুরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। এ কারণে সরকারের কঠোর নজরদারি দরকার। প্রয়োজন হলে ভোক্তার স্বার্থে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করতে হবে।’

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।