সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখে নাগা মরিচ

4 August 2022, 6:21:38

বাংলাদেশের মানুষ খাবার তালিকায় মরিচ রাখতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মরিচের পছন্দের তালিকায় অনেক জনপ্রিয় একটি নাম নাগা মরিচ বা বোম্বাই মরিচ। নাগা মরিচ পৃথিবীর সবচেয়ে ঝাল মরিচ হিসেবে খ্যাত। মূলত সুগন্ধ আর স্বাদের জন্যই নাগা মরিচের এত কদর। অনেকেই সখ করে নাগা মরিচ নিজ ছাদের উপর অথবা বারান্দার টবে চাষ করেন। বর্তমানে অনেকেই বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন এই নাগা মরিচের।

নাগা মরিচ এশিয়ার বাংলাদেশ এবং নিকটবর্তী ভারতের উত্তর-পূর্বাংশের আসাম রাজ্যের হাইব্রিড বা মিশ্র প্রজাতি। এটি ভারতের আসাম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরে এবং বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলে জন্মায়। নেপাল, থাইল্যান্ড এবং শ্রীলঙ্কায় বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলেও নাগা মরিচের ব্যাপক চাষ হয়।

সিলেট অঞ্চলে উৎপাদিত ঐতিহ্যবাহী এই নাগা মরিচ যুক্তরাজ্য, ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে রপ্তানি হচ্ছে।

ভারতের নাগাল্যান্ড থেকে এ মরিচের আগমন বলে এর নামকরণ করা হয়েছে নাগা মরিচ। নাগা মরিচেরই একটি প্রজাতি হলো বোম্বাই মরিচ, যা প্রচণ্ড ঝালের কারণে সর্বাধিক পরিচিত। ইংরেজি নাম কোবরা চিলি। আর বৈজ্ঞানিক নাম ক্যাসিকাম চিনেনসি। ঐতিহ্যবাহী এই মরিচ কোথাও কোথাও নাগা মরিচ, বোম্বাই মরিচ, কামরাঙা মরিচ, রাজা মরিচ, নাগাহরি, সাপের বিষ কিংবা ভুত মরিচ নামেও পরিচিত।

নাগা মরিচে থাকা পর্যাপ্ত ফলিক অ্যাসিড, ভিটামিন-এ, বি, সি এবং ‘ই’ রয়েছে যা মানুষের শরীর সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। বর্তমানে বিশ্বে মরিচের চার শরও বেশি জাত রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম মরিচে ৪০ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, রাইবোফ্ল্যাভিন ইত্যাদির ভালো উৎস।

মানুষের বুদ্ধির বিকাশে, লোহিত কণিকার গঠনে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে, হৃদরোগের ঝুঁকি প্রতিরোধে, সর্দি ও পেট ব্যথা উপশমে, চোখের জ্যোতি বাড়াতে মরিচের উপকারিতা অপরিসীম।

প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় শুধুমাত্র স্বাদ বৃদ্ধির জন্যেই নয়, নিজেকে সুস্থ রাখার জন্যেও এখন থেকে নাগা মরিচের আচার যোগ করুন তবে খাদ্যাভ্যাসে যুক্ত করার আগে যথেষ্ট সচেতনতা প্রয়োজন। জেনে নিন নাগা মরিচের গুণাগুণ ও উপকারিতা:

ক্যানসার প্রতিরোধে করে

নাগা মরিচে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা শরীরে ‘দ্বাররক্ষী’ হিসেবে কাজ করে থাকে। সম্প্রতি গবেষণায় দেখা গেছে নাগা মরিচে ‘ক্যাপসাইসিন’ যৌগ ক্যানসারের কোষ ধ্বংস করতে দারুণ সক্ষম। যত বেশি পরিমাণে এই যৌগটি দেহে জমা থাকবে ক্যানসারের আক্রান্তের ঝুঁকি ততটাই কমবে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে

নাগা মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে দারুণভাবে কাজ করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

নাগা মরিচ রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিসের রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে ক্যাপসেইসিনের ভূমিকা আছে। যাদের ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য নাগা মরিচ একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য হতে পারে।

হার্টের সমস্যার সমাধান করে

নাগা মরিচের ঝাল কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমায়। নাগা মরিচে বিদ্যমান ‘ক্যাপসাইসিন’ শরীরে এল.ডি.এল কোলেস্টেরলের (লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরল) মাত্রা কমায়। এল.ডি.এল কোলেস্টেরল আপনার শরীরে হৃদরোগ ও মস্তিষ্কে স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারন।

রুচি বাড়ায়

নাগা মরিচ মুখে তেঁতো ভাব দূর করতে এবং মুখে রুচি বাড়াতে দারুণ কাজ করে।

জিরো ক্যালোরি

নাগা মরিচে কোনো ক্যালোরি নেই। নাগা মরিচ খাওয়ার পরে শরীরের মেটাবোলিজম প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়!

ত্বকের জন্য উপকারী

নাগা মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-ই। যা ত্বকের প্রাকৃতিক তেল উৎপন্ন করতে সাহায্য করে থাকে বলে ত্বক অনেক সুস্থ থাকে। প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার ফলে শরীরের যেকোনো অংশে ত্বকের ইনফেকশন হওয়া থেকে এটি প্রতিরোধ করে থাকে।

খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে

নাগা মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে বোম্বাই মরিচ খেলে ভালো ফলাফল পাওয়া সম্ভব হয়। এছাড়াও সাধারণ সময়ে খাদ্য দ্রুত পরিপাক করতে সাহায্য করে।

মনমেজাজ ভালো রাখে

ঝাল কোনো খাবার বিশেষ করে বোম্বাই মরিচ খাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক থেকে ‘এন্ডরফিনস’ নিঃসৃত হয়, যা মনমেজাজ ভালো ও চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে থাকে।

চোখের জন্য উপকারী

ভিটামিন-সি এর পাশাপাশি বোম্বাই মরিচে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বেটা-ক্যারোটিন। যা সুস্থ চোখের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

আয়রনের পরিমাণ বাড়ায়

আয়রনপূর্ণ নাগা মরিচ। যাদের শরীরে আয়রনের ঘাটতি রয়েছে তাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশি করে বোম্বাই মরিচ যোগ করা জরুরি।

ওজন কমাতে সাহায্য করে

নাগা মরিচের ঝাল ওজন কমাতে সহায়তা করে। ‘ক্যাপসাইসিন’ নামক যৌগটিই ওজন কমানোতে সাহায্য করে। গবেষণায় দেখা যায় ‘ক্যাপসাইসিন’ যুক্ত ঝাল খাদ্য গ্রহণের সময় ও গ্রহণের পর ‘ক্যাপসাইসিন’ শরীরে একটি প্রভাব ফেলে, যাকে ‘থারমোজেনিক’ প্রভাব বলে। এই থারমোজেনিক প্রভাব দেহে যতক্ষণ পর্যন্ত থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত শরীরের চর্বি ক্ষয় হতে থাকে। সুতরাং আপনি ততক্ষণ ঝাল খাবার খাবেন ও এই ঝালের প্রভাব যতক্ষণ থকবে ততক্ষণ বিনা পরিশ্রমে ক্যালোরি ক্ষয় করে ওজন কমাতে পারেন।

বাণিজ্যিকভাবে বা শুধু নিজের প্রয়োজন মেটাতেই বাসার ছাদে বা বারান্দায় টবে আমরা নাগা মরিচের চাষ করতে পারি। নাগা মরিচের বীজ যেকোনো বাজারেই কিনতে পারবেন। নার্সারি, হর্টিকালচার সেন্টার বা গ্রামের হাটবাজারেও বোম্বাই মরিচের চারা পাওয়া যায়।

নাগা মরিচ গাছ অনেকদিন ফল দেয়। ১টা গাছে যে পরিমাণ মরিচ ধরে, তা খেয়েই শেষ করা কঠিন। বাংলাদেশের নাগা মরিচ লন্ডন আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্য হয়ে এখন সারা বিশ্বের সম্পদ। নাগা মরিচ পরিকল্পিতভাবে চাষ করে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করলে বছরে অন্তত ১শ কোটি টাকার ওপরে আয় করা সম্ভব।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।