মুমিনের প্রশিক্ষণের মাস রমজান

10 April 2021, 6:09:32

পবিত্র মাহে রমজান মুমিন বান্দাদের জন্য প্রশিক্ষণের মাস। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার দ্বারা তাকওয়া অর্জনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে বাকি ১১ মাস আল্লাহর বিধিবিধান পালনের মাধ্যমে জীবন পরিচালনার জন্য আল্লাহ পবিত্র রমজানের রোজা ফরজ করেছেন।

কুরআনুল কারিমে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ইরশাদ করেন—‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনিভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যাতে করে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।’

এ আয়াতে কারিমা থেকে আমরা স্পষ্ট বুঝতে পারছি, আল্লাহ বলছেন, যারা রোজা রাখবে তারা মুত্তাকি হতে পারবে, আল্লাহভীরু হতে পারবে, পরহেজগার হতে পারবে। রোজা মানুষের মধ্যে তাকওয়ার গুণ সৃষ্টি করে, আর কুরআন সে তাকওয়াসম্পন্ন ব্যক্তিদের সঠিক পথের দিশা দেয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা পবিত্র কুরআনের শুরুতে বলেছেন, ‘যালিকাল কিতাবু লা-রইবা ফিহি, হুদাল্লিল মুত্তাক্বিন।’—এই সেই কিতাব, যাতে কোনো সন্দেহ নেই; মুত্তাকিদের জন্য রয়েছে এতে পথের দিশা। আল্লাহ আমাদের একটি মাস উপবাসের মাধ্যমে, কঠোর পরিশ্রম করে তাকওয়ার গুণ অর্জন করতে বলেছেন। ‘তাকওয়া’ হচ্ছে— আল্লাহর ভয় ও সন্তুষ্টির উদ্দেশে যাবতীয় অন্যায় অপরাধ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা। দেখুন আজকের এই পাপ-পঙ্কিলতাপূর্ণ পৃথিবী, যার রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়েছে পাপাচার, অনাচার, শির্ক, কুফর, বিদআত। যেখানে অক্টোপাসের মতো ছড়িয়ে আছে দুর্নীতির কাঁটা। সেখানে একজন মুমিন নিজেকে কীভাবে যাবতীয় অন্যায় অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে সে শিক্ষাই দেয় রমজান। এ মাসের প্রশিক্ষণ হচ্ছে—সিয়াম সাধনার মাধ্যম্যে খাঁটি মুত্তাকি হওয়া, সত্কর্ম পরায়ণ হওয়া।

সম্মানিত পাঠক, রমজান মাস সংযমের মাস। রোজা আমাদের সংযমী হওয়ার শিক্ষা দেয়। অথচ অনেককেই রমজানে খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে অসংযমী হতে দেখা যায়, যা একেবারেই অনুচিত। অপরিমিত খাওয়াদাওয়ার ফলে ইবাদতে ব্যাঘাত ঘটে, আসল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। এছাড়া রোজা রেখে আমাদের অসদাচরণ ও খারাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেক রোজাদার আছেন রোজা রেখেও দ্রুত রেগে যান কিংবা মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। অনেকে মিথ্যা গিবত ও চোগলখুরিতে লিপ্ত হন। এর দ্বারা রোজার উপকারিতা নষ্ট হয়ে যায়, সাওয়াবও বিফল হয়। বোখারির এক বর্ণনায় হযরত আবু হুরায়রা (রা) সূত্রে বর্ণিত, নবি করিম (স) বলেন—‘যে ব্যক্তি রোজা রাখা অবস্থায় মিথ্যা কথা ও কাজ পরিত্যাগ করে না, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’

বুখারির অপর এক বর্ণনায় এসেছে, নবি করিম (স) বলেন, ‘যখন তোমাদের কারো সিয়ামের দিন উপস্থিত হয় তখন সে যেন কোনো অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উচ্চ কণ্ঠে কথা বলা বা ঝগড়া না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সঙ্গে ঝগড়া করতে আসে, তবে সে যেন তাকে বলে দেয়—আমি রোজাদার।’ রোজা আমাদের নিয়মের ওপর চলতে শেখায়। তাই রোজা রেখে অযথা রাত জাগা ও ঘুমিয়ে দিন কাটানো ঠিক নয়। এ অভ্যাসের ফলে রোজা রেখে সঠিকভাবে ইবাদত-বন্দেগি করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। ইসলামের বিধান অনুযায়ী সিয়াম শুধু উপবাসের নাম নয়; এটি একধরনের কঠিন নিয়মতান্ত্রিক সাধনা। মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত মুমিন বান্দার অত্যন্ত সচেতনভাবে কাটানো উচিত। তাকে পরকালীন জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সামনে রেখে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। সদাচার ও সত্য-সুন্দর জীবনযাপনের শপথ নিতে হবে। মূলত মাসব্যাপী নিরলস সাধনার মাধ্যমে একজন ধর্মপ্রাণ মানুষের শারীরিক, মানসিক, আত্মিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকগুলোর উন্নতির ব্যবস্থা হচ্ছে এই মাহে রমজান। তাই এর প্রতিটি মুহূর্ত যত্নের সঙ্গে ইবাদতের মধ্য দিয়ে আমাদের কাটাতে হবে।

সার্বিক অর্থে রমজান হচ্ছে—একটি প্রশিক্ষণের মাস, আখেরাত অর্জনের মাস, আত্মসংযম ধৈর্য ও সহনশীলতার মাস। এ মাসে নেক কাজের দিকে যেমন বেশি বেশি অগ্রসর হতে হবে, তেমনি মুক্ত থাকতে হবে সব ধরনের পাপাচার থেকে। রাব্বুল আলামিন আমাদের রমজানের সব শিক্ষা জীবনের সর্বস্তরে বাস্তবায়নের তাওফিক দান করুন। আমিন!

লেখক :আজিমপুর দায়রা শরিফের বর্তমান সাজ্জাদানশিন পির ও মুতাওয়াল্লি

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।