এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা: প্রধানমন্ত্রী

17 March 2021, 10:00:29

সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের এখন শুধু সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা এমনটা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পেছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই। সকল বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে এদেশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, ক্ষুধা-দারিদ্র্য-নিরক্ষরতামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করবই।’

বুধবার বিকালে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে আজকের এ অবস্থায় এসেছে। দেশকে পিছিয়ে দিতে বাংলাদেশবিরোধী অনেক অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয়। এসব অপশক্তি কোনোভাবেই সফল হতে পারবে না বলে জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ যে অবস্থানে পৌঁছেছে, সেখান থেকে তাকে সহজে অবনমন করা বা নামানো যাবে না। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ- আমরা এই করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছি।’

দেশবিরোধী অপশক্তির কথা জানিয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশবিরোধী অপশক্তি এখনও দেশে-বিদেশে সক্রিয় রয়েছে। তারা নানা অপতৎপরতার মাধ্যমে এ অর্জনকে নস্যাৎ করতে চায়।’

বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের অবসান হতে চলেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির প্রতীক্ষার প্রহরের আজ অবসান হতে চলেছে। আজ এমন এক সময়ে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছি, যখন বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে মর্যাদাশীল উন্নয়নশীল দেশের কাতারে সামিল হওয়ার চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করেছে। মাথাপিছু আয় সম্মানজনক দুই হাজার মার্কিন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছে। দারিদ্র্যের হার ২০ দশমিক ৫ শতাংশে হ্রাস পেয়েছে। দেশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। মানুষের গড় আয়ু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক সূচকে বাংলাদেশ প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের বিগত ১২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টা এবং জনগণের ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল আজকের এই প্রাপ্তি। এখন শুধু আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার পালা। পিছনে ফিরে তাকানোর কোনো সুযোগ নেই।’

অনুষ্ঠানে যোগ দেয়া মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহকে কৃতজ্ঞতা জানান প্রধানমন্ত্রী। শুভেচ্ছা জানান দেশটির জনগণকে। এছাড়া ভিডিও বার্তায় শুভেচ্ছা জানানো চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইয়োশিহিদে সুগাকেও ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।

এ সময় মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে দেশ গঠনে সহযোগিতাকারী বন্ধুপ্রতীম দেশ ও রাজনৈতিক নেতাদেরও কৃতজ্ঞতা জানান সরকারপ্রধান।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাঙালির রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক মুক্তির লক্ষ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ মাতৃভাষার মর্যাদা অর্জনের যে সংগ্রাম শুরু করেছিলেন সে ধারাবাহিক সংগ্রামের সাফল্যের ফসলই আমাদের স্বাধীনতা। যুদ্ধ-বিধস্ত দেশ, তার উপর শত শত বছরের পরাধীনতার গ্লানি। শোষণ, বঞ্চনা, ক্ষুধা, দারিদ্র্য-পীড়িত মানুষের এ জনপদকে একটা পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার মতো কঠিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে। অসাধ্য সাধন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অনেক স্বপ্ন ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের। বাংলাদেশকে তিনি উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়তে চেয়েছিলেন। কিন্তু ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট।’

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনের ১০ দিনের জমকালো আয়োজনকে সামনে রেখে প্যারেড স্কয়ারে তৈরি করা হয়েছে শহীদ মিনার, পদ্মা সেতু, জাতীয় মাছ ইলিশসহ দৃষ্টিনন্দন নানা প্রতিরূপ। যা আবহমান বাংলা এবং উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে প্রতিনিধিত্ব করবে। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে প্রতিদিন ৫০০ করে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এ আয়োজনে। যাদের সবাইকে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে হবে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ সনদ সঙ্গে নিয়ে। প্রথমদিনের অনুষ্ঠান সাজানো হয়েছে ‘ভেঙেছ দুয়ার, এসেছ জ্যোতির্ময়’ থিম দিয়ে।

সংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে উপস্থিত হন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহামেদ সলিহ।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।