লকডাউনের আগে চড়া বাজারদর, বিক্রির ধুম

30 June 2021, 9:40:11

রাত পোহালেই সর্বাত্মক লকডাউন। এক সপ্তাহ বাইরে বের হতে মানা। অকারণে বের হলে গ্রেপ্তারের হুমকিও দেয়া হয়েছে পুলিশের পক্ষ থেকে। এজন্য বিধিনিষেধ আরোপের আগের দিন রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজারে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে ক্রেতারা। স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি বিক্রি হচ্ছে বাজারে। আর এই সুযোগে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের দর বাড়িয়ে দিয়েছেন বিক্রেতারা।

বুধবার দিনভর রাজধানীর মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, শিয়া মসজিদ বাজার, টাউন হল বাজার, মিরপুর ১ নম্বর, ৬ নম্বর ও রায়েরবাজারসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

ব্যবসায়ীদের দাবি, অন্যান্য দিনের তুলনায় আজ বিক্রি কয়েক গুণ বেশি। ক্রেতাদের চাহিদা মাছ ও মাংস থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব পণ্যের প্রতি।

ক্রেতার চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেয়েছেন অনেক বিক্রেতা। যেখানে সন্ধ্যার পরেও মাছ বিক্রি শেষ হয় না সেখানে আজ দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতেই মাছের সংকট দেখা গেছে কয়েকটি বাজারে।

মোহাম্মদপুর শিয়া মসজিদ বাজারের মাছ বিক্রেতা পাভেল রহমান ঢাকা টাইমসকে জানান, দুপুরের মধ্যেই সব মাছ বিক্রি হয়ে গেছে। পাভেল বলেন, ‘আমরা জানতাম আজ মাছের চাহিদা বেশি থাকবে। তাই ঘাট থেকে মাছ বেশি এনেছিলাম। কিন্তু আমাদের ধারণার চাইতে চাহিদা অনেক বেশি ছিল। তাই তাড়াতাড়ি মাছ শেষ হয়ে গেছে। অনেক কাস্টমারকে মাছ দিতে পারিনি।’

মাছ বাজারের মতো একই চিত্র সবজির বাজারে। ওই বাজারের সবজি বিক্রেতা রায়হান হোসেন ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘দৈনিক কাঁচামরিচ আনি ২০ কেজি। আজ ৩০ কেজি আনছি। তাও শেষ হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যান্য সবজি ও সবকিছু আগের চাইতে বেশি আনছি। বিকালের মধ্যে সব শেষ। এত কাস্টমার হইব জানলে মাল আরও বাড়াইয়া আনতাম।’

শিয়া মসজিদ বাজারের পাশাপাশি একই চিত্র দেখা গেছে মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেটে। মার্কেটটির পাইকারি বাজারে চাল, আলু, পেঁয়াজ, আদা এবং রসুন কিনতে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে।

খুচরা বাজারেও ভিড় ছিল স্বাভাবিকের কয়েক গুণ। কাঁচা বাজারের তুলনায় ভিড়ের পরিমাণ কিছুটা বেশি দেখা গেছে মাছ এবং মাংসের দোকানে।

বাজারে মাছ বিক্রেতা পলাশ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘চিংড়ি মাছ সকালে শেষ হয়ে গেছে। রুই, কাতল যা ছিল দুপুরের মধ্যেই শেষ। বিকালে এখন কয়টা গুড়া মাছ নিয়ে বসে আছি। এত কাস্টমার হইব জানলে ঘাট থেকে মাছ আরও আনতাম।’

আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লকডাউন বাস্তবায়ন হচ্ছে। এক্ষেত্রে চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে এবং বাজারে সরবরাহ কমে যেতে পারে এমন শঙ্কায় আগেভাগেই সপ্তাহের বাজার সেরে নিতে চাচ্ছেন অনেক ক্রেতা।

টাউন হল বাজারে বাজার করতে আসা নিয়াজ রহমান ঢাকা টাইমসকে বলেন,‘আগামীকাল সবকিছু কড়াকড়ি থাকবে। যেহেতু সরকার সাত দিন সবাইকে বাসায় থাকতে বলেছে, আমিও সেটাই করতে চাই। তাই বাজারটা আগেভাগেই করে নিলাম। যেন সাত দিন খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে আসতে না হয়।’

আবার অনেকেই আগেভাগে বাজার সেরে নিয়েছেন পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা থেকে। শঙ্কার কথা জানিয়ে রায়ের বাজার এলাকার বাসিন্দা কোহিনুর বেগম ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘লকডাউন দিলে গাড়ি চলে কি না চলে! জিনিসপত্র ঠিকমতো পাওয়া যায় কি না! জিনিসের দাম বাড়তে পারে। এই জন্য এক সপ্তার বাজার করে রাখলাম।’

বাজারদরের চিত্র

রাত পোহালেই কঠোর বিধিনিষেধ এবং ক্রেতাদের বাড়তি চাহিদা সব মিলিয়ে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহজুড়ে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া ব্রয়লার মুরগি আজ বিক্রি হচ্ছে ১৬০ টাকায়। ক্রেতাদের এক টাকাও ছাড় দিতে রাজি নন বিক্রেতারা।

আবার কেজি প্রতি ২০ টাকা দাম বাড়লেও ক্রেতার চাহিদা কমেনি, বরং বেড়েছে কয়েক গুণ।

একই অবস্থা সবজির বাজারে। বরবটি, বেগুন, চিচিঙ্গা, ঢেঁড়স, ঝিঙে, পটল, দুন্দল সব কিছুরই দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মাঝারি আকারের একেকটির লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায়। পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা, আদা ১১০ টাকা থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা দরে, ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া রসুন আজ বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।

পুরো সপ্তাহ ১৮ থেকে ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও বুধবার প্রতি কেজি আলুর পেছনে ক্রেতাকে গুনতে হয়েছে ২৫ টাকা।

কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেশি গুনতে হয়েছে চালের বাজারে। পাইকারি বাজারে চিকন, মোটা সকল চালের দাম বস্তা প্রতি একশো থেকে দুইটা টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। যার প্রভাব পরেছে খুচরা বাজারে।

স্থিতিশীল আছে গরুর মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে আগের মতোই সাড়ে ৫০০ থেকে ৫৮০ টাকা কেজি দরে। তবে লকডাউনের প্রভাবে বুধবার দুপুরের পর বাজারে গিয়ে গরুর মাংস কিনতে পারেননি অনেক ক্রেতা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সকালে গরুর মাংস কিনতে বাজারে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড় ছিল।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।