রডের দাম কমাতে ভ্যাট আমদানি শুল্ক-আয়কর কমানোর দাবি

28 June 2021, 10:37:10

রডের দাম কমাতে ভ্যাট, আমদানি শুল্ক ও আয়কর কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স এসোসিয়েশন। ইস্পাত শিল্পে রড উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল গলনশীল স্ক্র্যাপ (মেল্টিং স্ক্র্যাপ) ৮০-৮৫ শতাংশ বিদেশ থেকে আমদানি এবং দেশ থেকে ১৫-২০ শতাংশ জোগান দেয়া হয়। দেশের ইস্পাত শিল্পের উদ্যোক্তারা আশঙ্কা করছেন কাস্টম ডিউটি, আমদানি অগ্রিম আয়কর, ভ্যাট ও এআইটি না কমায় রড তৈরির কাঁচামালের সঙ্কট দেখা দেবে ও রডের মূল্য বৃদ্ধি পাবে।

তারা বলছেন, বর্তমানে বাজারে প্রতিটন ৫০০ ডাব্লিউ/৬০ গ্রেডের রড ৭০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৬ মাস আগেও যা ছিল ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফেকচারার্স অ্যাসোসিসেয়শনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও শাহরিয়ার স্টিল মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মাসাদুল আলম মাসুদ গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের ইস্পাত শিল্পের রড উৎপাদনের জন্যে ব্যবহৃত প্রধান কাঁচামাল গলনশীল স্ক্র্যাপ (মেল্টিং স্ক্র্যাপ) ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়, দেশের ভেতর থেকে আসে বাকি ১৫ থেকে ২০ শতাংশ।

তিনি বলেন, বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার পাশাপাশি ইউরোপের দেশগুলো হতে সরবরাহ যেমন কমেছে তেমনি তাদের নিজস্ব চাহিদাও বেড়েছে। চীনে তাদের নিজস্ব কাঁচামাল থেকেই লৌহজাত পণ্য উৎপাদন করত। কিন্তু করোনাকালে চীন সরকার মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়ায় তাদের চাহিদার একটা বড় প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক বাজারে। মাসাদুল আলম বলেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্টিলের কাঁচামালের ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক কমাতে হবে, বরাদ্দ বাড়াতে হবে উন্নয়ন ব্যয়ে। আন্তর্জাতিক মূল্যের কথা পর্যালোচনা করে ঠিকাদারদের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এরই মধ্যে অনেক বড় বড় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধির কারণে নিমার্ণশিল্পেও ভাটা দেখা দিয়েছে। তাঁর আশঙ্কা ব্যবস্থা না নিলে রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, পাথর, হার্ডওয়্যার, টাইলস ফ্যাক্টরিগুলো হুমকির মুখে পড়বে এবং রাজমিস্ত্রি, ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদার ও নির্মাণ শ্রমিক মিলিয়ে ২ থেকে ২.৫ কোটি লোক এই করোনা মহামারির সময়ে কর্মবিমুখ হয়ে পড়বে।

মাসাদুল আলম বলেন, গলনশীল স্ক্র্যাপের মূল্য গত অক্টোবরে ছিল ৩০০ থেকে ৩৫০ ইউএস ডলার; এখন তা ৫৫০ থেতে ৫৯০ ইউএস ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফলে ভারতসহ বেশ কিছু দেশ রডের কাঁচামালের আমদানির ওপর শুল্ক কমিয়েছে। তিনি মনে করেন, দেশের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে স্টিলের কাঁচামালের ওপর ভ্যাট, ট্যাক্স, শুল্ক একদিকে কমাতে হবে অন্যদিকে উন্নয়নে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে মেল্টিং স্ক্র্যাপ আমদানি শুল্ক টনপ্রতি ১৫০০ টাকা, আমদানি অগ্রিম আয়কর ৫০০ টাকা এবং অগ্রিম ভ্যাট ৪% তথা প্রায় ২০০০ টাকা।

যা বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট হতে সমন্বয় করা হয় এবং রড বিক্রয় পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর দিতে হয় এআইটি ২% যা প্রায় ১৪০০ টাকা। আমদানি পর্যায়ে এ হার ৪%, যা প্রতিটনে ভ্যাট ২০০০ টাকা হতে সমন্বয় করা হতো এবং ইহা ভ্যাট আইনের পরিপন্থী। ভ্যাট আইনানুযায়ী কাঁচামাল থেকে বিলেট উৎপাদন ও বিলেট হতে রড উৎপাদন হওয়ার পর পণ্য বিক্রির সময় ভ্যাটের ২০০০ টাকা রিটার্ন দাখিলের পূর্বে প্রদান করে রিটার্ন দাখিল করতে হয়।

চলতি অর্থবছরে ওই ৪% এটি প্রত্যাহার করে বিক্রয় পর্যায়ে ২০০০ টাকা প্রদান করতে হবে। এই এটি প্রত্যাহরের কারণে মূল্য কমার কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করেন মাসাদুল আলম। তিনি বলেন, মূল্য কমাতে হলে আমাদের যেখানে আমদানি শুল্ক আছে ১৫০০ টাকা সেখানে যদি ৫০০ টাকা করা হয় তাহলে আমাদের উৎপাদন খরচ ১০০০ টাকা কমবে। বিক্রয় পর্যায়ে ভ্যাট যেখানে ২০০০ টাকা বিদ্যমান আছে এখানে কমিয়ে ৫০০ টাকা করা হলে এই ১৫০০ টাকা ভোক্তার ব্যয় কমবে।

উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত প্রধান কেমিক্যাল ফেরোলোয় (Ferroalloy)। যার মূল্য প্রতিটন ৮০০ ইউএস ডলার থেকে ৮৫০ ইউএস ডলার ছিল। বর্তমানে তা ১৪০০ ইউএস ডলার থেকে ১৪৫০ ইউএস ডলারে ক্রয় করতে হচ্ছে। এই করোনা মহামারির কারণে কন্টেইনার জাহাজগুলো সব দেশেই ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকে যার ফলে কাঁচামাল সরবরাহকারী কন্টেইনারের সংকট দেখা দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কন্টেইনারের ভাড়া দ্বিগুণ হয়েছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী মাসে কন্টেইনারের ভাড়া আরো বৃদ্ধি করবে। যা আগামী জুলাই মাস হতে কার্যকর হবে।

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।