হাত-পায়ে হঠাৎ ব্যথা কেন হয়, কী করবেন?
![](https://www.protichhobi.com/wp-content/uploads/2021/06/image-434879-1624421287.jpg)
আঘাত পাওয়া ছাড়াই অনেক সময় হাতে পায়ে ব্যথা দেখা দেয়। বিষয়টি অনেক সময় আমরা গুরুত্ব দিই না। এই অবহেলা বিপদের কারণ হতে পারে।
এই ব্যথা কোনো কোনো সময় স্বল্পমেয়াদী হয় আবার কখনও দীর্ঘসময় বয়ে বেড়াতে হয়। ধমনিতে ব্লক থেকেও অনেক সময় এই ব্যথা হয়। আবার হাত-পায়ের রক্ত চলাচলে বাধাপ্রাপ্ত হলেও এই সমস্যা দেখা দেয়।
হাত-পায়ে ব্যথার কারণ ও এ সমস্যা থেকে উত্তরণে করণীয় সম্পর্কে যুগান্তরকে পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ও ভাস্কুলার সার্জন ডা. আবুল হাসান মুহাম্মদ বাশার।
অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার কারণে অনেক সময় হাত-পায়ে ব্যথা দেখা দেয়।
আমরা সবাই জানি যে, রক্ত তরল অবস্থায় রক্তনালির ভেতর দিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে সঞ্চালিত হয়। রক্তনালি বা হৃৎপিণ্ডের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়াটা অস্বাভাবিক এবং বিপজ্জনক। বিভিন্ন কারণে হৃৎপিণ্ডের প্রকোষ্ঠের মধ্যে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে। জমাট বাঁধা রক্তের এ টুকরো রক্তস্রোতের সঙ্গে প্রবাহিত হয়ে মুহূর্তের মধ্যে শরীরের যেকোনো জায়গায় গিয়ে পৌঁছাতে পারে এবং সেখানকার রক্ত সরবরাহে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। মস্তিষ্কে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তাকে স্ট্রোক (Stroke) বলা হয়। হাত বা পায়ের ধমনি বন্ধ হলে ঘটনাটি পরিচিত হয় অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়া নামে। হৃৎপিণ্ডের ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়ার অনেক কারণ আছে।
রক্তনালি
মাঝে মাঝে রক্তনালি বা ধমনি নিজেই অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। হয়তো ধমনির ভেতরের দেয়ালে আগে থেকেই কলেস্টেরলের আস্তরণ ছিল। এ আস্তরণ কোন কারণে ভেঙে গেলে তার ওপর রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। এক পর্যায়ে এ জমাট রক্ত ধমনির রক্ত চলাচলের পুরো পথটাকেই বন্ধ করে দেয়। আর পুরো ঘটনাটা ঘটে অতি অল্প সময়ের মধ্যে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগীরা আগে থেকে ক্রনিক লিম্ব ইশকিমিয়ার লক্ষণাদি (যেমন হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা) প্রকাশ করেন যদিও সেই সময় তারা তা টের পান না বা গুরুত্ব দেন না। ‘অ্যাকিউট অন ক্রনিক লিম্ব ইশকিমিয়া’র মূল দৃষ্টান্ত হলেন এসব রোগী।
কখনও ধমনির ফুলে যাওয়া অংশ বা অ্যানিউরিজম থেকে জমাট রক্ত ছুটে গিয়েও পরবর্তী অংশের ধমনি বন্ধ করে অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার সৃষ্টি করতে পারে।
হাতের অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার ক্ষেত্রে সারভাইকাল রিবের কথা মাথায় না রাখলেই নয়। সারভাইকাল রিব ঘাড়ের নিচের দিকের কশেরুকা থেকে জন্ম নেওয়া একটি বাড়তি হাড় যা কখনও কখনও হাতে রক্ত সরবরাহকারী সাবক্লাভিয়ান ধমনির ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এ চাপের ফলে ধমনির ভেতরের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে করে অনেক সময় ধমনির আঘাতপ্রাপ্ত অংশ ফুলে যায় (অ্যানিউরিজম) ও এর ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়। এ জমাট রক্ত ছুটে গিয়ে পরবর্তী অংশের ধমনি বন্ধ করে দিয়ে অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার সৃষ্টি করে। রোগীরা ঠাণ্ডা হাত, তীব্র ব্যথা ও কালো/নীল আঙ্গুল নিয়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন। এসব ক্ষেত্রে রক্তনালির অপারেশনের সঙ্গে সঙ্গে ঘাড়ের বাড়তি হাড় কেটে ফেলাও চিকিৎসার অংশ। সারভাইকাল রিব ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের বেশি হয়।
রক্ত
কখনও কখনও রক্তও অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার কারণ হয়ে ওঠে। রক্তের উপাদানগত সমস্যা বা কোনো কারণে সাময়িকভাবে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি পেলে (যেমন পানিশূন্যতা) রক্ত ধমনির ভেতরেই জমাট বেঁধে যায় ও রক্ত চলাচলের পথ বন্ধ করে দেয়।
অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার লক্ষণ
* হঠাৎ করে হাত বা পা ঠাণ্ডা হয়ে গিয়ে তীব্র ব্যথা শুরু হয়।
* হাত, পা দ্রুত ফ্যাকাসে ও নীল হয়ে যেতে শুরু করে।
* হাত-পায়ে বোধ শক্তি কমে যেতে থাকে।
* নাড়াচাড়ার ক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে।
* আক্রান্ত অংশে নাড়ির স্পন্দন টের পাওয়া যায় না।
কী ঘটে
পিভিডি বা ক্রনিক লিম্ব ইশকেমিয়ার সঙ্গে অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার মূল তফাৎটা হল সময়ের। ক্রনিক লিম্ব ইশকেমিয়াতে যে ঘটনা অনেক দিন, মাস, বছর ধরে একটু একটু করে ঘটতে থাকে, অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার ক্ষেত্রে সে ঘটনাই কয়েক মিনিট বা ঘণ্টার মধ্যে ঘটে যায়। অর্থাৎ রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় একেবারে হঠাৎ করে। তাই অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ার বহিঃপ্রকাশও অত্যন্ত নাটকীয়। ক্রনিক লিম্ব ইশকেমিয়াতে একটু একটু করে রক্ত চলাচল কমতে থাকায় শরীর বিকল্প রাস্তা বা কোলেটারাল (Collateral) তৈরি করে নেওয়ার সময় পায়। অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়াতে বিকল্প পথ তৈরির সময় পাওয়া যায় না বলে আক্রান্ত অংশ হঠাৎ করে প্রায় পুরোপুরি রক্ত তথা অক্সিজেন ও পুষ্টি বঞ্চিত হয়ে পড়ে। দ্রুত রক্ত সরবরাহ ফিরিয়ে আনা না গেলে এর পরিণতি অঙ্গহানী।
কী করবেন
অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়া বুঝতে পারাটাই আসল কাজ। রোগীর লক্ষণ দেখে সমস্যার কথাটা মাথায় এলেই রক্ষা। রোগীর উচিত সময় নষ্ট না করে নিকটস্থ হাসপাতালে বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। চিকিৎসকের দায়িত্ব রোগ নির্ণয় বা আন্দাজ করে দ্রুত রক্তনালি বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠানো। এ পাঠানো ব্যাপারটা নিয়ে আমাদের দেশে বিরাট সমস্যা দেখা যায়। প্রথমত রোগ নির্ণয়ে অনেকে ব্যর্থ হন, আবার রোগ নির্ণয় হলেও পাঠাতে বিলম্ব হয়। পথের দূরত্ব যোগাযোগ ব্যবস্থার বেহাল দশা এক্ষেত্রে দায়ী। কারণ যাই হোক, চিকিৎসার এ বিলম্বের মূল্য অনেক বেশি। যারা অর্থের মূল্য বোঝেন, তারা অর্থ উপার্জনে সময়ের দাম বুঝাতে বলেন- ‘টাইম ইজ মানি’। রক্তনালির চিকিৎসক হিসেবে আমরা অ্যাকিউট লিম্ব ইশকেমিয়ায় সময়ের দাম বুঝনোর জন্য বলি- ‘টাইম ইজ লিম্ব’।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।