অভিমান ভুলে ওবায়দুল কাদেরের বাসায় ফুল হাতে কাদের মির্জা
গত কয়েক মাস ধরে স্থানীয় রাজনীতি নিয়ে বড়ভাই আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে মান-অভিমান চলছিল নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার। তবে এবার তিনি বড়ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এসে জানালেন, আপনজনদের সঙ্গে মান-অভিমান সাময়িক ব্যাপার। এটা স্থায়ী হতে পারে না। বড়ভাইয়ের সঙ্গে রাজনীতিতে ঐক্যবদ্ধ থাকার ঘোষণাও দেন আলোচিত এই মেয়র।
শনিবার বিকালে ওবায়দুল কাদেরের সরকারি বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন আবদুল কাদের মির্জা। দুই ভাইয়ের মধ্যে আধাঘণ্টার বেশি ওই বৈঠকে কোম্পানীগঞ্জের দলীয় রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সাক্ষাতের একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করে আবদুল কাদের মির্জা লেখেন, ‘আমার পিতৃসমতুল্য সহোদর বড় ভাই। বাংলাদেশের মেধাবী রাজনীতির প্রতীক, যিনি তৃণমূল থেকে নিজ মেধা ও শ্রমে এশিয়ার অন্যতম রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকে পদাস্থিত হয়েছেন। বাংলাদেশের মন্ত্রিপরিষদের অন্যতম সফল মন্ত্রী হয়েছেন। আমরা সর্বদা রাজনীতি করেছি জনগণের জন্য জনকল্যাণের জন্য। মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ বিশ্বাস করে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, ইনশাআল্লাহ, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জনগণের জন্য নিজেদের নিয়োজিত রাখবো।’
মির্জা বলেন, ‘মানুষের মান-অভিমানের মধ্যে মানব জীবন রচিত হয়। আপনজনের প্রতি সাময়িক অভিমান হলেও তা কখনো স্থায়ী হতে পারে না। সকল গ্লানি ভুলে শান্তির কোম্পানীগঞ্জ প্রতিষ্ঠার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পতাকাতলে একত্রিত হতে আহ্বান জানাচ্ছি। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।’
সাক্ষাৎ শেষে আবদুল কাদের মির্জা সাংবাদিকদের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যে দূরত্ব ছিল তা ঈদের দিনই শেষ হয়ে গেছে। আজকে সৌজন্য সাক্ষাৎ। আমার ছোটভাই মনে হয় ক্যানসারে আক্রান্ত। ওর চিকিৎসার বিষয়ে আলাপ করলাম। আর আমার কোম্পানীগঞ্জে যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য, শান্তি স্থাপনের জন্য কিছু দিকনির্দেশনা তিনি আমাকে দিয়েছেন। উনি যে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেই মোতাবেক আমার কার্যক্রম পরিচালনা করবো।’
নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে আপনি যে অভিযোগ করেছিলেন সেটা নিয়ে কি আলোচনা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ওই বিষয়ে উনি দ্বিমত পোষণ করেন নাই। দুর্নীতি, অপরাজনীতি এগুলোর বিষয়ে উনি বলেছেন, আমার নেত্রী (শেখ হাসিনা) দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার। আমিও ব্যক্তিগতভাবে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বোচ্ছার। এগুলোর সাথে কোনো দ্বিমত নাই। জেলা আওয়ামী লীগের বিষয়ে তিনি বলেছেন, নেত্রীর টেবিলে আছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি অচিরেই সিদ্ধান্ত দেবেন।’
ভাবীর বিষয়ে আপনি যে অভিযোগ করেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পারিবারিক বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।’
এর আগে গতকাল শুক্রবার চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মির্জা কাদের। সাক্ষাৎকালে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দলের ঐক্য ও সংহতি মজবুত করার জন্য কাদের মির্জাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, কোম্পানীগঞ্জে দলের মাঝে বিভাজন কমিয়ে দলকে শক্তিশালী করতে হবে। এ অনুরোধে জনগণ ও দলের স্বার্থে বিভেদ ভুলে কাজ করার অঙ্গীকার করেন কাদের মির্জা।
গত ২৪ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের সঙ্গে বৈঠক করে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল। ওই বৈঠকে বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।
সম্প্রতি ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে ছোটভাই আবদুল কাদের মির্জার সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে কয়েক দফার সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। এছাড়া কাদের মির্জা বিভিন্ন সময় ফেসবুক লাইভে এসে বড়ভাইয়ের কড়া সমালোচনা করেন। বিব্রতকর এই অবস্থার মধ্যে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনকে বিষয়টি সুরাহার দায়িত্ব দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবেই কাদের মির্জা বড়ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: