বিএনপির নেতৃত্বে সমস্যা নেই, দাবি শীর্ষ নেতাদের
বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করেছেন দলটির সিনিয়র নেতারা। যারা সুধী সেজে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে তারা প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা।
শুক্রবার বিকালে এক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এই দাবি করেন তারা। মুক্তিযুদ্ধকালে দুই সন্তানসহ বেগম খালেদা জিয়ার বন্দী দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে এই ভার্চুয়াল সভা হয়।
সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় বেগম খালেদা জিয়া পাকিস্তানের হাতে বন্দী ছিলেন, এখন তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে বন্দী। ওয়ান-ইলেভেনে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে চলে যাবার জন্য বারবার প্রলুব্ধ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের মাটি ও মানুষকে ছেড়ে তিনি যাননি।’
মির্জা আব্বাস বলেন, ‘২০০৮ সালে কারাগার থেকে বের হওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটা প্রসঙ্গে আমার কথা হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, তাকে ওয়ান ইলেভেনে ১৩টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। প্রস্তাবগুলো মেনে নিলে ম্যাডামকে মুক্ত ও বিএনপিকে ক্ষমতায় বসানো হবে। কিন্তু খালেদা জিয়া একটি প্রস্তাবও মেনে নেননি। তিনি বলেছিলেন-প্রতিটি প্রস্তাবই ছিল দেশ ও জাতির বিরুদ্ধে, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে। প্রস্তাবগুলো কী ছিল? প্রশ্ন করলে ম্যাডাম বলেছিলেন, বলা যাবে না। হ্যাঁ, একটা জায়গায় সমঝোতা করতে হয়েছে, তাছাড়া তোমাদের কাউকে জীবিত বের করতে পারতাম না।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেখেন একদিকে দেশপ্রেম আরেকদিকে কর্মীর প্রেম। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানকে থামানোর জন্য, মুক্তিযুদ্ধকে থামানোর জন্য যেমন বেগম খালেদা জিয়াকে দুই শিশু সন্তান তারেক ও কোকোকেসহ আটক করা হয়েছিল, তেমনি ওয়ান-ইলেভেনে বেগম খালেদা জিয়াকে থামাতে তার সন্তান তারেক ও কোকোকে আটক করা হয়েছিল। তাদের আটক করার আগেও দরকষাকষি হয়েছিল। তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকোকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া অথবা ম্যাডামকে বিদেশে চলে যেতে হবে। নেত্রীর মুখ থেকে শুনেছি, ওইদিন আমাদের নেতা বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছিলেন, আমি কোনো অন্যায় করিনি, কেন আমাকে বিদেশ যেতে হবে? আমার যদি কোনো অন্যায় থাকে বিচার করুক। বিচার তো করতে পারল না, তারা নির্যাতন করল। সেদিন খালেদা জিয়া মাতৃত্ব নয়, দেশ ও দেশের মানুষকে বেছে নিয়েছিলেন।’
গয়েশ্বর বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত রয়েছে। গণতন্ত্র ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র সেটা আমাদের সামনে আরও আছে। আমরা এখনো নেত্রীকে মুক্ত করতে পারলাম না। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তৎকালীন সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদ ম্যাডামকে নির্বাচন না করতে বলেছিলেন, বিনিময়ে তিনি ভালো থাকবেন। কিন্তু ম্যাডাম বলেছিলেন সামরিকের চেয়ে গণতন্ত্র অনেক ভালো। ওই নির্বাচনে ম্যাডাম অংশ নিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, গণতন্ত্রের প্রশ্নে আমি সরকারকে সহযোগিতা করতে চাই।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘কিছু সুধীজন আমাদের মাঝে মাঝে কিছু উপদেশ দিয়ে থাকেন। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলতে থাকেন। তাদেরকে সবিনয়ে বলব, এই কথাগুলো প্রকারান্তরে ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করে। যারা ক্ষমতায় আছে তাদের ক্ষমতায় থাকার পথকে প্রশস্ত করে। আমাদের নেতৃত্ব নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। জনগণকে বিভ্রান্ত করবেন না। সমস্যা গণতন্ত্রের- দেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। ফ্যাসিজম চেপে বসে আছে। আমাদের নেতৃত্ব পদে পদে পরীক্ষিত এবং পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ।’
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘গণতন্ত্রের নেতৃত্ব যারা দেন তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হবে, অপপ্রচার চালানো হবে- আমরা যেন কোনোভাবে বিভ্রান্ত না হই। সেদিকে কান না দিয়ে আমাদের কৌশল আমরাই নির্ণয় করি এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার ক্ষেত্রে বর্তমান নেতৃত্বকে তার পাশে থেকে সাহসী করি; আমরা যেন আমাদের কাজটি সততার সাথে করি।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘এই সরকার সম্ভবত পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সেক্ষেত্রে সরকার আরেকটি পাতানো নির্বাচন করতে পারে। এই সময়ে আমাদের ওপর চাপ আসতে পারে। সেই চাপে যদি আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নত না হন, আমাদের নেতা তারেক রহমান নত না হন, আপসহীন নেত্রীর কর্মী হিসেবে আমাদের ক্লান্ত হওয়ার সুযোগ নেই। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপসহীন থেকে আমরা যাতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারি- সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন, জেনারেল থেকে রাজনীতিতে এসেছেন, স্টেটম্যান হয়েছেন, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারক হয়েছেন- বিশ্বে কয়েকজন নেতার মধ্যে জিয়াউর রহমান বীরউত্তম একজন। তাকে বাংলাদেশের কোনো রাজনীতিবিদের সাথে তুলনা করার প্রয়োজন আমরা মনে করি না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে বিএনপি কখনো রাজনীতি করেনি। মুক্তিযুদ্ধের মাইলফলকগুলো সামনে আনা হলে রাজনৈতিকভাবে বিএনপি লাভবান হবে।’
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: