Tuesday 21 May, 2024

For Advertisement

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েই জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধ করব: সংসদে প্রধানমন্ত্রী

11 January, 2023 1:29:11

স্মার্ট বাংলাদেশ গড়েই জাতির পিতার রক্তের ঋণ পরিশোধের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফিরেই বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি বলেছিলাম এদেশ স্বাধীন করে ছাড়বো, আজ দেশ স্বাধীন। তিনি বলেছিলেন, রক্ত দিয়ে হলেও এ রক্তের ঋণ আমি শোধ করে যাবো। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন করেছে, একজন বাঙালি বেঁচে থাকতেও এদেশের স্বাধীনতা নষ্ট হতে দেব না। বাংলাদেশ পৃথিবীর ইতিহাসে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে বেঁচে থাকবে, বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। তিনি তার রক্ত দিয়ে ঋণ শোধ করে গেছেন, এখন আমাদের পালা। আমাদের কর্তব্য তার রক্তের ঋণ শোধ করা। যেদিন গৃহহীন গৃহ পাবে, দেশের মানুষকে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবো। সেটা হবে রক্তের ঋণ শোধ করা।

ADVERTISEMENT

মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ও ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭ ধারায় এ সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন করেন সরকারি দলের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান। আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের আমির হোসেন আমু, মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও নূরুল ইসলাম নাহিদ, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশিদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ও রওশন আরা মান্নান।

সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি-১৪৭-এর প্রস্তাবনায় বলা হয়, সংসদের অভিমত এই যে, ১০ই জানুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন বাঙালির জাতীয় জীবনে এক বিশেষ মহিমান্বিত দিবস। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ২৪ দিন পর পাকিস্তানের বন্দিদশা থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি দেশে ফিরেছিলেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিব। বাঙালি জাতির জীবনে ১০ই জানুয়ারি একটি বিশেষ তাৎপর্যবহ দিন। এই দিনে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে, তাঁর আদর্শকে বুকে ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে দৃপ্ত শপথ গ্রহণ করা হোক।

আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমি শপথ করছি জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ- স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ব। সেটাই হবে জাতীর পিতার রক্তের ঋণ শোধ করা। দেশের অগ্রযাত্রা কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গেছেন। জিডিপি ৯ শতাংশ নিয়ে গিয়ে ছিলেন। কেউ এখনও তা স্পর্শ করতে পারেনি। আমরা ক্ষমতায় এসে ৮ শতাংশ পর্যন্ত নিতে পেরেছি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে অনেক আগেই বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হতো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের ভোট ও ভাতের অধিকার ফিরিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু, তিনি ক্ষমতা গ্রহনের মাত্র তিন বছর পরে ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচন দিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন জাতীয় ঐক্য, মানুষের উন্নয়ন। তিনি চেয়েছিলেন দারিদ্র মুক্ত উন্নত সম্মৃদ্ধ দেশ। এদেশের মানুষ যাতে দু বেলা দু মুঠা ভাত ডাল ভাত খেয়ে বেঁচে থাকে। শেখ হাসিনা বলেন, অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতায় এসেছিলেন এরশাদ, জিয়া, মোস্তাক। কই তারা তো মানুষের উন্নয়ন দেশের উন্নয়ন করে যেতে পারে নি। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের মানুষ খেতে পায়, দেশের উন্নয়ন করে চলেছে।

বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যার্বনের স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ভুট্টো তার নিজের স্বার্থে টিকে থাকার জন্য এবং ভারতীয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রধানদের পাকিস্তানকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তিদর জন্য চাপ সৃষ্টির কথাও বলেন। তারই পরে ৮ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু মুক্তি পান। তিনি প্রথমেই লÐনে যান। আমার মা শুধু মাত্র বলতে পেরেছিলেন.. ‘তুমি কি বেচে আছো’’ আর কোন কথা মা বলতে পারেন নি। ১০ জানুয়ারী তিনি ভারত ঘুরে দেশে ফিরে এসে প্রথমে পরিবারের কাছে না গিয়ে জনগণের কাছে যান। তিনি বলেন, দীর্ঘ ৯ মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী কারাগারে বন্দি থাকেন। তাকে ফাঁসি দেবার জন্য কারাগারে কবর খোড়ও হয়। তবে আমাদের এ যুদ্ধ কিন্তু জনযুদ্ধ ছিল। সেই সাথে ভারতের মিত্র বাহিনীও আমাদের সাথে সাথে যুদ্ধ করেছে, হাজার হাজার ভারতীয় সেনাও মারা যান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠা, দেশের মানুষের মুক্তি চেয়েছিলেন, শোষিত বঞ্চিত মানুষের রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছিলেন। এই বঞ্চিত মানুষগুলোর মুখে দু’বেলা দু মুঠো ভাত তুলে দিতে চেয়েছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তান সরকার ভাষার ওপর আঘাত আনলো, তিনি ভাষার অধিকার ফিরিয়ে আনতে ভাষা অন্দোলন শুরু করেন এবং সেই পথ ধরেই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু ইয়াহিয়া খান ও পাকিস্তানী চক্রান্ত ক্ষমতা হস্তান্তরে টাল বাহনা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। অভুতপূর্ব সাড়া দেয় সবাই। এই অত্যাচারের পরে ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। বঙ্গবন্ধু তা আগে থেকেই জানতেন, সেজন্য তিনি ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনে বলেন, যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে হবে, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। তিনি সে সময় স্বাধীনতার ঘোষনাও দেন। তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রতিটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন সুচতুর ভাবে। তারই নির্দেশনা মত আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ভারতে আশ্রয় নিয়ে সরকার গঠন করে।

আমির হোসেন আমু বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে বলেছিলেন, আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে যাবে যদি অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে না পারি। তিনি শূন্য হাতে শোষন মুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশে ফিরে কী পেয়েছিলেন? রাস্তা নেই, ব্রিজ নেই, রেল নেই, খাদ্যগুদামে খাদ্য নেই, রিজার্ভ নেই, ব্যাংকে টাকা নাই-এমন একটি যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে তিনি এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সংগ্রাম শুরু করেন। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীরা অসাংবিধানিক সরকারগুলো স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করে, তারা এখনো স্বাধীনতা-সার্বভৈৗমিত্বের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহতের আহŸান জানান তিনি।

তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধু না জম্মালে আমরা এ দেশ পেতাম না, স্বাধীন পতাকা পেতাম না। বঙ্গবন্ধু মনে করতেন এদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) বাঙালীদের না। সে জন্য তিনি বার বার বাঙালী জাতিকে সব দিক থেকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষনে তিনি দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে নির্দেশ দিয়েছিলেন। তারই নির্দেশে বাঙারী জাতি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। তার পরে ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়। তার ২৪ দিন পরে পাকিস্তান সরকার বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়, তিনি ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে এলে দেশর জনগণ পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ উপলব্ধি করে।

মতিয়া চৌধুরী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ ও দেশের মানুষ বড় ভালবাসতেন। তিনি বলতেন, মানুষের ওপর বিশ^াস না হারাতে। সেই আপন ভাবা মানুষই তাকে শেষ পর্যন্ত হত্যা করে।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, বঙ্গবন্ধুকে পাকিস্তান সরকার জেল খানায় বন্দী করে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতসহ বিশ^ জনমতের চাপে তারা সেটা করতে পারিনি। তার পরে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট তাতে হত্যা করে এই বাঙারীরাই। এর পরে অসাংবিধানিক ভাবে ক্ষমতা দখলের করে দেশকে পিছিয়ে নেওয়া হয়।
ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন তার মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যুদ্ধ করার বিভিন্ন স্মৃতি চারণ করেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, বঙ্গবন্ধু মানুষকে খুব বিশ^াস করতেন। আর তার সেই বিশ^াসের মূল্য দিতে হয় তাকে জীবন দিয়ে। তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল। যারা ভেবেছিল, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভারতের উপনিবেশ হবে। সে ধারণা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি-জামায়াতের সাথে কোন মিটমাট নয়। ওদের সাথে কোন আপস নয়। ওদের ধ্বংস করেই সামনে এগুতে হবে। আরেক ধাপ সামনে এগুতে হলে ওদের ধ্বংস করতেই হবে।তিনি বলেন, বিএনপি জামাত জোট মিমাংসিত বিষয়কে অমিমাংসিত করার চক্রান্ত করে চলেছে। এরাই ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে, তারা এখনো দেশের স্বাধীনতাকে বিশ^াস করে না, এদের বিষদাত এখুনি ভেঙে দেওয়ার আহŸান জানান তিনি।

কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে মারার রাস্তা তৈরি করেন তারই কাছের মানুষেরা। একদল বিপথগামী স্বাধীনতা বিরোধী গোষ্টি দেশী বিদেশী চক্রান্ত করে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে।

সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা বলেন, বিভিন্ন সময় বঙ্গবন্ধুকে ব্র্যাকেটবন্ধী করে রাখার চেষ্ঠা করা হয়। বঙ্গবন্ধু শুধু নিদিষ্ট একটি দলের নেতাকর্মীদের পিতা নয়, তিনি সমগ্র জাতির পিতা। তাই তাকে কেউ যাতে দলীয় ব্যানারে আবদ্ব করে রাখতে না পারে সে জন্য জাতির পিতার কন্যাদ্বয়কে তা নিশ্চিত করতে হবে।

Latest

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore