For Advertisement
পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরুর আগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ বানোয়াট: প্রধানমন্ত্রী
পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শুরুর আগে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ কানাডার আদালতই নাকচ করেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেই রায়ের পর এ নিয়ে আর কোনো কথা থাকে না। প্রমাণ হয়েছে, সেই অভিযোগ ভুয়া, বানোয়াট।
মঙ্গলবার বিকালে পদ্মা সেতুর শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে দক্ষিণ আর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তের পদ্মা সেতু উত্তর থানাসহ পুলিশের পাঁচটি বিশেষ কার্যক্রমের ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে পুলিশ কর্তৃক দ্বিতীয় পর্যায়ে নির্মিত ১২০টি গৃহ হস্তান্তর, পুলিশ হাসপাতালসমূহের আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ১২টি পুলিশ হাসপাতাল, ৬টি নারী ব্যারাক ও অনলাইন জিডি কার্যক্রমের শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী।
গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ আয়োজনে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান। আগামী ২৫ জুন জমকালো আয়োজনে দেশের সবচেয়ে বড় সেতুটির উদ্বোধন করতে যাচ্ছে সরকার। তার আগেই উদ্বোধন করা হলো থানা দুটি।
পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়ার পর দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ নিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘যখন দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি, তখন বলে দুর্নীতির ষড়যন্ত্র ছিল। এটাকে আমি চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম এবং সেই থেকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমরা বাংলাদেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় অর্জন করেছি। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করব।’
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে যখন মিথ্যা অপবাদ দেয়া হয়, একটি মামলাও করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক কানাডার আদালতে। সেই আদালতের রায় স্পষ্টভাবে তারা…কোর্ট বলে দেয়, এখানে কোনো দুর্নীতিতো হয়নি। ওয়ার্ল্ড ব্যাংক যেসব অভিযোগ করেছে সেগুলো সব ভুয়া, বানোয়াট, মিথ্যা। কাজেই এ কথার পর তো আর কোনো কথা থাকে না।
কিন্তু তারপর যারা আবার আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, বদনাম দিয়েছে, তাদের টাকায় আমি পদ্মা সেতু করব না, এটা আমার সিদ্ধান্ত ছিল। আল্লাহর রহমতে আমরা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের টাকায় পদ্মা সেতু তৈরি করেছি।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণে যখন উদ্যোগ নেয়, তখন ঋণচুক্তি করা হয় দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক, এডিবি, জাইকা, আইডিবির সঙ্গে। তবে সেতুর পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির চেষ্টার অভিযোগ তুলে একপর্যায়ে বিশ্বব্যাংক সরে গেলে অন্যরাও এই প্রকল্প থেকে সরে দাঁড়ায়।
এই ঘটনায় সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা ও তাকে গ্রেপ্তারের দাবি করেছিল বিশ্বব্যাংক। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশন তার বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ না পাওয়ার কথা জানিয়ে এই ব্যবস্থায় রাজি হয়নি।
পরে বিশ্বব্যাংক কানাডার আদালতে এসএনসি লাভালিন নামে দেশটির পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। সেতুর কাজ শুরুর তিন বছর পর ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে কানাডার আদালত রায় দেয় পদ্মা সেতুতে দুর্নীতিচেষ্টার অভিযোগ বায়বীয়, গালগপ্প।
সে সময় কানাডার পত্রিকা টরন্টো স্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়, রায়ের আদেশে বিচারক লেখেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছিল, তা জল্পনা, গুজব আর জনশ্রুতি ছাড়া কিছুই না। কানাডার সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক ইয়ান নর্দেইমার এ রায় দেন।
এই রায় দেয়ার চার বছর আগেই বিশ্বব্যাংক প্রকল্পটি থেকে সরে দাঁড়ায়। এই দাতা সংস্থাটি সরে দাঁড়ানোর পর জাইকা, এডিবি, আইডিবিও চলে যায়। তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ অর্থে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন।
২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী এই সেতুর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। দুই বছর পর শুরু হয় মূল সেতুর নির্মাণকাজ। সে বছর বসে প্রথম স্প্যান। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বরে বসে শেষ স্প্যান। এরপর সেতুর বাকি কাজ শেষ হয়। এই সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধের পেছনে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. ইউনূসের ভূমিকা নিয়েও আবার অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই দেশের একজন বিশ্বখ্যাত মানুষ হলেও একটা ব্যাংকের এমডি পদ তার বয়সের কারণে ছেড়ে দিতে হচ্ছে। সেটা তিনি মানতে পারেননি। একদিকে যেমন আমাদের সরকারের বিরুদ্ধে দুই-দুইটা মামলা করে হেরে গেছে, পরবর্তীতে সে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে তাদের কাছে তদবির করে যেভাবেই হোক আমাদের পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দিয়েছিল এবং মিথ্যা অভিযোগ আমাদের ওপর নিয়ে আসে।
প্রধানমন্ত্রী এই সেতুকে দেখছেন বাংলাদেশের মানুষের সক্ষমতা ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে। তিনি বলেন, ‘এই পদ্মা সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ, পদ্মা সেতুতে যারা যাবেন তাদের নিরাপত্তা বিধান, এটাও আমাদের কর্তব্য। কাজেই পদ্মা সেতুকে সুরক্ষিত করা এবং যাত্রীসেবা দেয়া বা আশপাশের যে জনগণ তাদের সেবা দেয়া আমাদের কর্তব্য।
সে জন্যই সেতুর উত্তর ও দক্ষিণে দুটি থানা করে দেয়া হয়েছে বলে জানান সরকারপ্রধান। এর মধ্যে শরীয়তপুরের জাজিরায় হয়েছে ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণ’আর মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় হয়েছে ‘পদ্মা সেতু উত্তর’ থানা।
Latest
For Advertisement
- প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
-
- গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
-
- হাসিনা রহমান শিপন,
- রাশিকুর রহমান রিফাত
Developed by WebsXplore