- যাত্রার ১০ দিন আগের ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু শনিবার
- জুটির সংকটে মাহফুজ-বুবলীতে আশার আলো
- কাশিমপুর কারাগারে সাংবাদিক শামসুজ্জামান
- উত্তরা থেকে আগারগাঁও মেট্রোরেলের সব স্টেশন চালু
- রমজানের জুমার দিন যা যা করবেন
- ব্রয়লার মুরগি ২২০ টাকা, কমেছে ডিমের দাম
- শামীমের লড়াকু ফিফটিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১২৪ রান
- পর্ন তারকাকে অর্থপ্রদান মামলায় অভিযুক্ত ট্রাম্প
- ২৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ
- টস জিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ, রিশাদের অভিষেক

কাল থেকে লকডাউনে দেশ

ভয়ঙ্কর রূপ নিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। প্রতিদিন করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যু যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। মানুষের মৃত্যুর মিছিল থামাতে বাধ্য হয়েই লকডাউনের পথেই হাঁটছে সরকার। মহামারী সামাল দিতে এবং মানুষের জীবন সুরক্ষায় আগামীকাল সোমবার থেকেই সারাদেশে জারি হতে চলেছে লকডাউন। সরকার থেকে বলা হয়েছে, এক সপ্তাহের জন্য জারি থাকবে এই লকডাউন। গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীর নিজের সরকারি বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। লকডাউনে কী কী খোলা থাকবে তা সরকারি প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত জানা যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
ভিডিওবার্তায় বলেছেন, লকডাউনে শুধু জরুরি সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলা থাকবে। শিল্পকারখানাও খোলা থাকবে। শ্রমিকরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে পালা করে কাজ করবেন। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীও সরকারি প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত উল্লেখ থাকবে বলে কথা জানান। আজ রোববার এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে বলে সরকারি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠ প্রশাসন অনুবিভাগ) শেখ রফিকুল ইসলাম সমকালকে বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ-সংক্রান্ত সারসংক্ষেপ শনিবার রাতে চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোববার সকালে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।
গতকাল লকডাউনের ঘোষণার পর রাজধানীর বাজার, রেল, বাস, লঞ্চস্টেশনে মানুষের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। সাত দিনের ছুটিতে অনেকে গ্রামে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কাজে ঢাকায় আসা অনেকে গ্রামে ফিরছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ভিড় লক্ষ্য করা গেছে রাজধানীর নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর বাজারগুলোতে। এই ভিড় আরও উচ্চহারে সংক্রমণের ভয় জাগাচ্ছে।
এদিকে সংক্রমণ পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে রাজধানীর কভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো ভিড় সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। প্রায় ৯৮ শতাংশ শয্যায় রোগী ভর্তি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, সংক্রমণের লাগাম টেনে ধরতেই তড়িঘড়ি লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের হাইকমান্ড। সেতুমন্ত্রীর ঘোষণার আগ পর্যন্ত লকডাউনের বিষয়ে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোও অবগত ছিল না।
এর আগে করোনা সংক্রমণের মুখে গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত ‘সাধারণ ছুটি’ ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে দফায় দফায় ওই ছুটি বাড়িয়ে ৩১ মে পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়। সে হিসেবে সরকারিভাবে গতকালই প্রথম ‘লকডাউনের’ ঘোষণা এলো।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের অনেকের ধারণা, আপাতত সাত দিন লকডাউনের কথা সরকারিভাবে বলা হলেও ধাপে ধাপে এটি বাড়বে। কারণ সাত দিন লকডাউনের বিষয়টি বিজ্ঞানসম্মত নয়। সুতরাং এটি বাড়াতে হবে। তাদের অভিমত, কিছু প্রতিষ্ঠান বন্ধ আবার কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা রেখে লকডাউনের সিদ্ধান্তও বৈজ্ঞানিক নয়। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের যে ভাবনা থেকে লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে, এতে তা কমবে না। বরং নানা অব্যবস্থাপনা তৈরি হতে পারে। এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত- দুটিই বিপর্যস্ত হতে পারে বলে মনে করেন তারা।
এদিকে গত চব্বিশ ঘণ্টায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আরও ৫৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনায় মোট ৯ হাজার ২১৩ জনের মৃত্যু হলো। একইসঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৫ হাজার ৬৮৩ জনের শরীরে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। দেশে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬ লাখ ৩০ হাজার ২৭৭ জনে পৌঁছাল। একইসঙ্গে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর বিপরীতে করোনা সংক্রমিত আরও ২ হাজার ৩৬৪ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এর মধ্য দিয়ে করোনা সংক্রমিত মোট ৫ লাখ ৪৯ হাজার ৭৭৫ জন সুস্থ হয়ে উঠলেন।
দেশে গত বছরের ৮ মার্চ প্রথম করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়। গত ১ এপ্রিল তা ৬ লাখ ছাড়িয়ে যায়। পরদিন ২ এপ্রিল ৬ হাজার ৮৩০ জন নতুন রোগী শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক দিনে দেশে এ মহামারিতে এটাই সর্বোচ্চ সংক্রমণ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিনের মাথায় গত বছরের ১৮ মার্চ একজনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ৩১ মার্চ মৃতের সংখ্যা ৯ হাজার ছাড়িয়ে যায়। গত বছরের ৩০ জুন এক দিনে ৬৪ জনের মৃত্যু হয়। এক দিনে এ রোগে এটিই সর্বোচ্চ প্রাণহানি।
খোলা থাকবে সরকারি অফিস-আদালত, তবে উপস্থিতি থাকবে সীমিত :লকডাউনে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে, সে সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে গতকাল বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে জরুরি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবরা। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউসও ওই বৈঠকে অংশ নেন।
বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক সূত্র সমকালকে জানায়, সন্ধ্যা ৬টায় ওই বৈঠক শেষ হয়। বৈঠকে লকডাউনের বিষয়ে একাধিক সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওইসব সিদ্ধান্তের সারসংক্ষেপ তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পেলে তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হবে।
এদিকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার লকডাউনে গত বছরের মতো সরকারি অফিস-আদালতে সাধারণ ছুটি থাকবে না। তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উপস্থিতি থাকবে ৫০ শতাংশেরও কম। কর্মস্থলে যেতে হবে ব্যক্তিগত গাড়িতে বা সংশ্নিষ্ট দপ্তরের যানবাহনে। জনসাধারণের চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এক জেলা থেকে আরেক জেলা এবং এক উপজেলা থেকে আরেক উপজেলায় জনসাধারণের চলাচল ‘কঠোরভাবে’ নিয়ন্ত্রিত থাকবে। এ জন্য বাস-ট্রেন ও লঞ্চ বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব আন্তঃজেলা গণপরিবহন।
জেলা প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের শপিংমলও। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানপাট সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকবে না। তবে লকডাউন চলাকালীন ঘরে নামাজ ও অন্য ধর্মাবলম্বীদের ঘরে বসে প্রার্থনা করতে হবে। আগামী এক সপ্তাহ চলবে এভাবে।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আপাতত সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। তবে লকডাউনের শেষের দিকে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। তিনি বলেন, এই সাত দিন মানুষকে ঘরের মধ্যে রাখতে পারলে সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব হবে। অন্যথায় সংক্রমণ আরও ছড়িয়ে পড়বে।
আগে সাধারণ ছুটির সময় শ্রমজীবী মানুষের জন্য বিভিন্ন ধরনের সহায়তার ব্যবস্থা ছিল। এবারও সেই ব্যবস্থাগুলো অব্যাহত রাখা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেগুলো নিয়ে চিন্তাভাবনা করা রয়েছে। প্রজ্ঞাপনে এসব বিষয়ে বিস্তারিত থাকবে বলে জানান তিনি।
এর আগে ২৯ মার্চ সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়সহ সব ক্ষেত্রে সব ধরনের জনসমাগম সীমিত করাসহ ১৮ দফা নির্দেশনা দেয় সরকার। এরপর সেগুলো বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ও কড়াকড়ির ঘোষণা আসতে থাকে। তবে পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় লকডাউনের ঘোষণা এলো।


প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: