Thursday 25 April, 2024

For Advertisement

জামিন বাতিল ইস্যুতে হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন দায়রা জজ

21 June, 2022 10:59:04

জাল ডলারের মামলায় আসামিকে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। ওই জামিনে কারামুক্ত হন আসামি জাকিরুল। পরবর্তীকালে হাইকোর্টের দেওয়া ওই জামিনাদেশ বাতিল করেন জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু। বিষয়টি নজরে আসলে তলব করা হয় অধস্তন আদালতের ওই বিচারককে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সর্বশেষ খবর পেতে Google News অনুসরণ করুন
উচ্চ আদালতে হাজির হয়ে ওই বিচারক জামিন বাতিলের বিষয়ে কোন সুদত্তর দিতে পারেননি। পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি। হাইকোর্ট নিঃশর্ত ক্ষমার বিষয়টি গ্রহণ করে তাকে ভবিষ্যতে সতর্ক হয়ে বিচারিক দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন। বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ সোমবার (২০ জুন) এই আদেশ দেন।

ওই বিচারকের উদ্দেশ্যে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন বলেন, আমরা তো জামিন আদেশটি বাংলা ভাষায় লিখেছি। বিদেশি ভাষা ব্যবহার করিনি। আপনি কি এই আদেশের মর্মার্থ বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। হাইকোর্ট যখন জামিন মঞ্জুর করেছে তখন আপনি কোন এখতিয়ারে সেই জামিন বাতিল করেন।

গত বছরের ১১ ডিসেম্বর জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ হতে অবৈধ জাল ডলারসহ মো. জাকিরুলকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫-এ ধারায় দেওয়ানগঞ্জ থানায় মামলা করা হয়। পরদিন জামিন না-মঞ্জুর করে আসামিকে কারাগারে পাঠায় ম্যাজিস্ট্রেট আদালত। এরপর জেলা জজ আদালতে জামিন চান আসামি। গত ৩ মার্চ জামালপুরের সিনিয়র দায়রা জজ মো. জুলফিকার আলী খান আসামির জামিন না-মঞ্জুর করেন।

এ সংক্রান্ত আদেশে বলা হয়, আসামির দখল হতে ৫০টি ডলারের ৩০টি জ্বাল নোট উদ্ধার করা হয়েছে। ফরেনসিক রিপোর্টে উক্ত ডলারগুলো জ্বাল নোটি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। চার্জশিট দাখিল হয়েছে। হাজতবাস স্বল্প। জামিন দিলে পলাতক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে জামিন না-মঞ্জুর করা হলো। এরপর আসামি হাইকোর্টে জামিন চান। গত ১০ এপ্রিল বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ আসামির স্থায়ী জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। ওই রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামি জাকিরুলকে জামিন দেয় আদালত।

এই জামিন আদেশ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দাখিলের পর কারাগার থেকে মুক্ত হন আসামি। পরে মামলাটি বিচারের জন্য জামালপুরের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনুর আদালতে যায়। সেখানে নতুন করে জামিন চান আসামি। কিন্তু বিচারক জামিন আবেদন না মঞ্জুরের আদেশ দেন।

আদেশে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষের বক্তব্য ও নথি পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, এই মামলায় যথাযথভাবে উচ্চ আদালতের নির্দেশিত প্রক্রিয়া সম্পন্ন ব্যাতিরেকে অপরিপক্ব প্রক্রিয়ায় আসামি পক্ষ নিম্ন আদালত হতে আদেশপ্রাপ্ত হন। জামিনের আবেদনে কোন নতুন উপাদান না থাকায় এবং বিচারাধীন মামলার ধারা অজামিনযোগ্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

স্পেশাল ট্রাইব্যুনালের এই আদেশের অনুলিপি হাইকোর্টের নজরে আনেন আসামির আইনজীবী মো. সারওয়ার আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ বাতিল করেছে বিচারিক আদালত। এরপরই হাইকোর্ট গত ৬ জুন ওই বিচারককে তলব করেন। তলব আদেশে হাইকোর্ট বলেছে, গত ১০ এপ্রিল আসামিকে জামালপুরের চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সন্তুষ্টিতে উপযুক্ত জামিননামা দাখিলের শর্তে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে মুক্তির আদেশ দেন। উক্ত আদেশ অনুযায়ী জামিননামা দাখিলপূর্বক আসামি জামিনে মুক্ত হন।

এরপর মামলাটি বিচারের জন্য জামালপুরের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বদলি হলে অভিযোগ গঠন বিষয়ে গত ২৪ মে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিলো। ওইদিন আসামির জামিন আবেদন না-মঞ্জুর করেন ওই আদালতের বিচারক। এক্ষেত্রে ওই বিচারকের মন্তব্য ছিলো নিম্নরূপ: “সর্বোপরি ফৌজদারি বিবিধ মামলাটি (১৬৬৭০/২২) বিচারাধীন তথা হাইকোর্টে নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। এহেন পরিস্থিতিতে আদালত জামিনের বিষয়ে আদৌও কোন সিদ্ধান্ত নিতে অপরারগ। কাজেই সার্বিক বিবেচনায় আসামির জামিন আবেদন না মঞ্জুর করা হলো”।

এ প্রসঙ্গে হাইকোর্ট আরও বলেছে, হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ যেখানে রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে আসামিকে মুক্তির আদেশ প্রদান করেছেন। সেখানে বিচারক জিন্নাৎ জাহান ঝুনু উপরোক্ত মন্তব্যে কিভাবে আসামির জামিন না-মঞ্জুর করতে পারেন? এই তলব আদেশের পর গত ১৫ জুন আসামিকে জামিন দেন ট্রাইব্যুনালের ওই বিচারক। কিন্তু নিজের আদেশ রিকল না করে জামিন দেওয়টাও ভুল ছিলো বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতের এই তলব আদেশে গতকাল সোমবার সকালে হাইকোর্টে হাজির হন ওই বিচারক। শুরুতেই তার আদেশের বিষয়ে ব্যাখ্যা জানতে চায় হাইকোর্ট। আদালতের জিজ্ঞাসার জবাবে ওই বিচারক বলেছেন, আমি আদেশটি সঠিকভাবে অনুধাবন করতে পারিনি। দুঃখ প্রকাশ করছি।

এ পর্যায়ে আদালত বলেন, আমরা প্রায়শই: লক্ষ্য করছি অধস্তন আদালতের অনেক বিচারক হাইকোর্টের আদেশ ঠিকভাবে না পড়েই আদেশ দিচ্ছেন। যদি উচ্চ আদালতের আদেশ বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে জেলা জজশীপের সিনিয়র জজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সেটাও আপনারা করেন না।

এ পর্যায়ে ওই বিচারক বলেন, ভবিষ্যতে আর এ ধরনের ভুল হবে না। নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি। এরপরই হাইকোর্ট তার ক্ষমার আবেদন গ্রহণ করে জামিনের না মঞ্জুরের আদেশটি রিকল (প্রত্যাহার) করার নির্দেশ দেন।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আবুল হাশেম ও আসামি পক্ষে মো. সারওয়ার আলম চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এই আইনজীবীরা জানান, হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করায় অধস্তন আদালতের ওই বিচারককে ভৎসনা করেছে। পরে বিচারক নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore