- নানার কবরে চিরনিদ্রায় শায়িত পাইলট আসিম জাওয়াদ
- চুক্তি ছাড়াই যুদ্ধবিরতি আলোচনা শেষ, রাফাতে ব্যাপক হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল
- তানজিদের ফিফটি, বাংলাদেশের উড়ন্ত সূচনা
- মূত্রের রং দেখে জেনে নিন শারীরিক অবস্থা কেমন
- ছেলের মতো মেয়ের আকিকাতেও আয়োজনের কমতি রাখতে চান না পরী
- টাকি মাছের ভর্তা
- ডেভিড স্লেটন মিল বাংলাদেশে মার্কিন বিশেষ রাষ্ট্রদূত হিসেবে মনোনীত
- দেশে দ্বিতীয় স্যাটেলাইট নির্মাণের কাজ চলছে: প্রধানমন্ত্রী
- সাকিব-মুস্তাফিজের কল্যাণে টাইগারদের শ্বাসরুদ্ধকর জয়
- ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণে কিংবা কোলেস্টেরল কমাতে পটলের যাদুকরী গুণ
জুস ফ্যাক্টরির অগ্নিকাণ্ডে আহতদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ হাইকোর্টের
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুডস-এর সেজান জুস ফ্যাক্টরিতে আগুনে হতাহতের ঘটনায় স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুসন্ধান হচ্ছে কী না তা, পর্যবেক্ষণে রেখেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে আহতদের চিকিৎসায় অবহেলা হলে তা আদালতের নজরে আনতে বলা হয়েছে। এদিকে আহতদের তালিকা করে তা প্রকাশ করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
হাইকোর্ট বলেছেন, মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় দেশের মানুষ উদ্বিগ্ন। আমরাও মর্মাহত। বিষয়টি আদালতের নজরে এসেছে। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি, কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে অনুসন্ধান হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কীনা তা দেখছি। আদালত আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে বলেন, আহতদের হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে কীনা, কোনো গাফিলতি হচ্ছে কীনা তা দেখুন। সমস্যা হলে আদালতকে জানাবেন। আর ক্ষতিপূরণ বিষয়ে আদেশের বিষয়ে আদালত বলেছেন, আগে ডিএনএ পরীক্ষা সম্পন্ন হোক। এরপর এবিষয় দেখা যাবে। একইসঙ্গে নিয়মিতভাবে আদালত খোলার পর রিট আবেদন করার জন্য সংশ্লিস্টদের পরামর্শ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ রবিবার এ পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। জুস ফ্যাক্টরিতে আগুনের ঘটনায় হতাহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা এক রিট আবেদনের ওপর শুনানিকালে এ মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। রিট আবেদনে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য এককোটি টাকা এবং আহতদের প্রত্যেকের পরিবারের জন্য ৩৫ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), বাংলাদেশ লিগ্যাল অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট(ব্লাস্ট), বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) এবং সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি শনিবার ওই রিট আবেদন দাখিল করে। শনিবার রাতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে ই-মেইলে এই রিট আবেদন পাঠানো হয়। রবিবার হাইকোর্টে রিট আবেদনটির ওপর শুনানি হয়। রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, এস এম রেজাউল করিম, ব্যারিস্টার অনিক আর হক, অ্যাডভোকেট মো. বদরুদ্দোজা বাবু ও নীনা গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস ও বিপুল বাগমার।
গত ৮ জুলাই বৃহস্পতিবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজিব গ্রুপের হাসেম ফুডসের সেজান জুসের কারখানায় আগুন লেগে ব্যাপক ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে এখন পর্যন্ত ৫২ জন শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। আহত হয়েছেন
আরও কমপক্ষে ২৫ জন। এই হতাহতের ঘটনায় ১০ জুলাই রূপগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় প্রতিষ্ঠানটির মালিক (সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক) আবুল হাসেম, তার ছেলে হাসীব বিন হাসেম, তারেক ইব্রাহীম, তাওসীব ইব্রাহীম, তানজীম ইব্রাহীম, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) শাহান শাহ আজাদ, উপমহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ ও প্রকৌশলী মো. আলাউদ্দিনকে আসামি করা হয়েছে। এরইমধ্যে এই আট আসামিকে গ্রেপ্তারের পর চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এ অবস্থায় হতাহতের পরিবারের জন্য ক্ষতিপুরণ চেয়ে রিট আবেদন করা হলো।
রিট আবেদন উপস্থাপন করেন ব্যারিস্টার সারা হোসেন। তিনি বলেন, এরইমধ্যে সকলেই জেনেছে যে ওই ভবন নির্মান ও সেখানে ফায়ার ব্যবস্থায় ক্রুটি ছিল। ভবন থেকে বের হবার সব রাস্তা বন্ধ ছিল। ফলে সেখানে কর্মরত শিশুরা পুড়ে মারা গেছে। তিনি বলেন, এর আগেও হাইকোর্ট তৈরি পোষাক কারখানার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু এটা ভিন্ন কারখানা। এরকম সব কারখানায় নিয়ম-কানুন একদমই অনুসরণ করা হচ্ছে না। আমরা চাই, এরকম যত কারখানা আছে সেখানে যথাযথভাবে পরিদর্শন করা হোক। আর নিহত ও আহতদের ক্ষতিপুরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাচ্ছি। তিনি বলেন, এরইমধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে যে অনুদান বা সাহায্য দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা ক্ষতিপূরণ নয়, ওটা সহায়তা মাত্র।
এসময় আদালত বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। সমস্ত জাতির সঙ্গে আমরাও শোকাহত। আদালত বলেন, এরইমধ্যে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখন তদন্ত হবে। আদালত বলেন, এটা ঠিক যে ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবার হকদার। তবে এরইমধ্যে সরকারের শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ান সরকারিভাবে দুই লাখ টাকা দেওয়ার কথা বলেছেন। আজকে পত্রিকায় দেখেছি, শ্রম সচিব আহতদের দেখতে হাসপাতালে গেছেন। ক্ষতিপূরণ দিচ্ছেন। তবে পর্যাপ্ত কিনা জানি না। আদালত বলেন, সরকারের শ্রমিক কল্যাণ ফান্ড থেকে এ টাকা দেওয়া হবে। যা মালিক পক্ষ থেকে আদায় করা হবে। আদালত বলেন, যে ৫২টি লাশ উদ্ধার হয়েছে তার মধ্যে ১টি সনাক্ত হওয়ায় তা হস্তান্তর করা হয়েছে বলে খবরে পড়েছি। এখনো ৫১টি লাশ সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এটা ২১ দিনের আগে সম্ভবও হবে না। আদালত বলেন, বাকী লাশগুলো চিহ্নিত না হচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব না। তাই অপেক্ষা করুন।
রিট আবেদনকারীপক্ষ ক্ষতিপূরণের বিষয়ে আদেশের জন্য বারবার নিবেদন করায় আদালত ইউনাইটেড হাসপাতালে অগ্নিকান্ডের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ওই মামলায়ও অন্তবর্তীকালীন আদেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আপিল বিভাগ তা স্থগিত করে দেয়। পরে নিয়মিত আদালত খোলার আদেশ দেওয়া হলে তা আর স্থগিত করেনি আপিল বিভাগ। একারণে বলছি, নিয়মিতভাবে আদালত খুলুক। এরমধ্যে মরদেহ সনাক্ত হোক। এরপর ক্ষতিপূরণের বিষয়টি দেখা যাবে।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত বলেন, ওটা জুসের ফ্যাক্টরি। অথচ কোনো জুস নাই। কেমিক্যালে ভরা। আমের জুস, আমের কোনো চিহ্ন নাই। সবই কেমিক্যালে ভরা।
আদালত বলেন, ফ্যাক্টরি পরিদর্শক কি করেছে? তারা যথাযথভাবে পরিদর্শন করেছে কীনা? তারা তাদের দায়িত্ব পালন করেছে কীনা সবই দেখা হবে। আদালত বলেন, আপনাদের উদ্বেগ বুঝতে পারছি। আদালত আপনাদের সঙ্গে আছে। মাত্র ২/৩ দিন হলো। সব কিছু প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। তদন্ত কমিটি হয়েছে। তবে কতটুকু স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত হচ্ছে বা আদৌ হচ্ছে কিনা বা দেরি হচ্ছে কিনা, তা আমরা দেখি। কোর্টের দরজাতো আর বন্ধ হচ্ছে না। আদালত বলেন, পত্রিকায় পড়লাম, প্রতিষ্ঠান মালিক বিবৃতি দিয়ে বলেছে, তারা শ্রমিকের পাশে আছে। তারা যদি চিকিৎসার খরচ না দেয় তবে আমরা বিষয়টি দেখবো। আমরা সবার কর্মকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করছি।
শুনানির এক পর্যায়ে আদালত আহতদের চিকিৎসার বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলকে স্বাস্থ্য ও শ্রম সচিবের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। আদালত বলেন, আহতদের তালিকা করে তা যেন প্রকাশ করা হয়। কতজন আহত হয়েছে তা সকলের, সংশ্লিষ্টদের আত্মীয়স্বজনের জানা দরকার।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: