Saturday 20 April, 2024

For Advertisement

জীবন-জীবিকা রক্ষার বাজেট চূড়ান্ত

1 June, 2021 11:14:36

করোনা মহামারিতে বাড়ছে ব্যয়, আগামীতেও তা অব্যাহত থাকবে। সে হিসাবে কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না রাজস্ব আদায়। এতে আয় ও ব্যয়ের বড় ব্যবধানে বেড়ে যাচ্ছে ঘাটতির পরিমাণও। এমন পরিস্থিতিতে প্রথমবারের মতো জিডিপির ৬ শতাংশের বেশি ঘাটতি ধরে চূড়ান্ত করা হয়েছে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট।

যার আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি মোট জিডিপির ১৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ৬৪ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা। যা বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

করোনার ধাক্কা সামলাতে সরকার আয়ের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। এই আয় দিয়ে আগামীতে বড় খরচগুলো সামাল দিতে হবে। সব মিলে এই করোনাকালীন ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এটি জিডিপির ১১ দশমিক ৩৫ শতাংশ। চলতি বছরে এ আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫১৭ কোটি টাকা। করোনা মহামারিতেও চলতি বছরের চেয়ে ৩৬ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা বেশি আদায় করতে চান অর্থমন্ত্রী। আর মোট আয়ের মধ্যে রাজস্ব খাত থেকে আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক অনুদান নেওয়া হবে ৩ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা।

আসন্ন বাজেট প্রসঙ্গে সম্প্রতি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জানিয়েছেন, দেশের সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়েই আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট দেওয়া হবে। এ বাজেটে সবার স্বার্থ সংরক্ষণ করা হবে। পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক মানুষকে সঙ্গে রাখা হবে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, এ বাজেট নিঃসন্দেহে পুরোপুরি বাস্তবায়ন হবে না। বর্তমান ভিত্তির ওপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ রচনা করতে হয়। হঠাৎ বড় ধরনের ব্যয় বাড়ালে হবে না। বর্তমান রাজস্ব আয়ের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।

আগামী বছর একই ধারা থাকবে। আর রাজস্ব আহরণ কম হলে ব্যয় কমাতে হয়। পাশাপাশি প্রশাসনিক অদক্ষতা ও জবাবদিহিতার অভাবে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেটিও ব্যয় করা যাচ্ছে না। উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য খাতে যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। একটি বাজেট দেওয়া দরকার, বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা থাকা দরকার, সেটি ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবতার সঙ্গে মিল না থাকলে এ বাজেট কাগুজে পরিণত হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, করোনার মধ্যে চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত রাজস্ব আয় যা আদায় হয়েছে সেটি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম। এরপরও আগামী অর্থবছরে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য পূরণে কর খাত থেকে আদায় হবে ৩ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এই করসমূহের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত কর ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত কর হচ্ছে ১৬ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৪৩ হাজার কোটি টাকা।

করোনা মহামারি আগামী অর্থবছরে থাকবে- এমনটি ধরেই বাজেটে ব্যয় খাত নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ এতে চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বাড়বে। যে কারণে ২০২১-২২ অর্থবছরে সরকারের পরিচালন ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৬১ হাজার ৫শ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। এর মধ্যে আবর্তক ব্যয় ৩ লাখ ২৮ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা, উন্নয়ন ব্যয় ২ লাখ ৩৭ হাজার ৭৮ কোটি টাকা, ঋণ ও অগ্রিম ৪ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা এবং খাদ্য হিসাব হচ্ছে ৫৯৭ কোটি টাকা।

আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ফারাক বেড়ে যাওয়ায় আগামী বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরে ঘাটতি বাজেট জিডিপির ৫ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে এখনো রাখা হয়েছে। তবে আগামী বছর অনুদানসহ ঘাটতির পরিমাণ ৬ দশমিক ১ শতাংশ চূড়ান্ত করা হয়েছে। টাকার অঙ্কে ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা। আর অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ।

সাধারণ ঘাটতি পূরণ করা হয় ঋণের মাধ্যমে। কোভিড-১৯ এর কারণে বিভিন্ন দাতা সংস্থা বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। বাজেট সহায়তা হিসাবে আগামী বাজেট ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেওয়া হবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে নেওয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা। এছাড়া সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা এবং অন্যান্য খাত থেকে নেওয়া হবে ৫ হাজার ১ কোটি টাকা। পাশাপাশি বিদেশি ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা। ঋণ করার কারণে বিপরীতে সুদ পরিশোধ করতে হয়। এজন্য আগামী বছরে সুদ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলের সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, বাজেট ঘাটতি ৬ শতাংশ হলেও কোনো অসুবিধা হবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাজেট বড় হওয়া ভালো। না হলে আগামীতে যেসব বড় ব্যয় আছে সেটি করা সম্ভব হবে না। সরকারের বাজেট ছোট হলে অসুবিধা আছে। মানুষের হাতে টাকা গেলে অর্থনীতি সম্প্রসারিত হবে। তিনি আরও বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়াতে হবে। কোভিড-১৯ এর কারণে সেটি কিছুটা কমে গেছে।

তবে ঋণ ও জিডিপির পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে ঘাটতি বেশি হলেও সমস্যা হবে না। বিশ্বের অনেক দেশ আছে যাদের ঘাটতি বাজেট আমাদের তুলনায় অনেক বেশি। আগামী বাজেটে আটটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে করোনা নিয়ন্ত্রণে অর্থায়ন ও স্বাস্থ্য খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ নিশ্চিত, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রাসরণ করা। এছাড়া প্রণোদনা প্যাকেজ সফলভাবে বাস্তবায়ন, নিু আয়ের মানুষের মধ্যে স্বল্প ও বিনামূল্যে খাদ্য বিতরণ, অধিক খাদ্য উৎপাদনে কৃষিতে গুরত্ব এবং মানবসম্পদ উন্নয়নকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে।

জানা গেছে, করোনার আঘাতে নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে আসন্ন বাজেটে। এবারই প্রথম দেশের ১৫০টি উপজেলার সব বয়স্ক জন ও বিধবা নারীকে ভাতা দেওয়া হবে। সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বাড়বে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী ভাতাও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ জনকে এই সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে।

তবে করোনাভাইরাস মহামারির এই সংকটকালে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা থাকছে আগামী অর্থবছরের বাজেটে। দেশে উৎপাদিত এবং বেশি ব্যবহার হয়-এমন বেশির ভাগ পণ্যের দাম নাগালে রাখতে দেশি শিল্পে ব্যাপক হারে রাজস্ব ছাড় দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দেশে কম্পিউটারসহ কিছু পণ্যের উৎপাদন উৎসাহিত করতে সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেশি হারে শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। তবে শুল্ক ছাড় পাচ্ছে কৃষিযন্ত্র, স্বাস্থ্য সুরক্ষা পণ্য। এতে ওই সব পণ্যের দাম কমতে পারে। বিড়ি, সিগারেটসহ তামাকজাতীয় পণ্যের ওপর বাড়তি কর আরোপের ঘোষণা আসছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুন করে কর আরোপ না করায় চাল, ডাল, চিনি, লবণ, দেশে উৎপাদিত পেস্ট, পাউরুটি, সাবান, বোতলজাত পানি, ফলের জুস, মসলা, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়বে না। কর অব্যাহতি-রেয়াতি সুবিধা এবং আমদানি করা সমজাতীয় পণ্যে শুল্ক আরোপ করায় বিদেশি খেলনার দাম বাড়লেও কমবে দেশি খেলনার দাম। আমদানি করা সম্পূর্ণ মোটরসাইকেলের চেয়ে দেশে সংযোজিত মোটরসাইকেল কম দামে পাওয়া যাবে।

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore