Sunday 19 May, 2024

For Advertisement

দেশে দুর্বল ও অতি দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা ৩৮

13 March, 2024 12:42:34

দেশের দুই-তৃতীয়াংশ ব্যাংকের অবস্থা দুর্বল এবং অতি দুর্বল। এর মধ্যে ১২টির অবস্থা খুবই নাজুক। এর মধ্যে ৯টি রেড জোনে চলে গেছে। অপর ৩টি রেড জোনের খুব কাছাকাছি থাকলেও তাদের অবস্থান ইয়েলো জোনে। এর বাইরে আরও ২৬টি ইয়েলো জোনে অবস্থান করছে। অন্যদিকে মাত্র ১৬টি ব্যাংক গ্রিন জোনে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিদেশি ব্যাংক। অর্থাৎ গ্রিন জোনে দেশীয় ব্যাংকের সংখ্যা মাত্র ৮টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিচারে রেড জোনের ব্যাংকগুলো সবচেয়ে খারাপ (পুওর) এবং ইয়েলো জোনের ব্যাংকগুলো দুর্বল (উইক)। আর গ্রিন জোনের ব্যাংকগুলো ভালো মানের (গুড)। অর্থাৎ দেশে এখন সবলের চেয়ে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যাই বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ব্যাংক হেলথ ইনডেস্ক অ্যান্ড হিট ম্যাপ’ শীর্ষক এক গোপন প্রতিবেদনে এমন ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে। এতে দুর্বল ব্যাংকগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

সম্প্রতি নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনুমোদন নিয়ে ওই প্রতিবেদন অফসাইট সুপারভিশন, ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি এবং পরিদর্শন বিভাগগুলোতে পাঠানো হয়েছে। ২০২৩ সালের জুনভিত্তিক তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি করা হয়েছে। দেশে সবল ব্যাংকের সঙ্গে যখন দুর্বল ব্যাংক একীভূত করার আলোচনা জোরালো হচ্ছে, তখনই সামনে এলো এমন ভয়াবহ তথ্য।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ তদারকি করেও দুর্বল ব্যাংকগুলোর অবস্থার উন্নতি করা যাচ্ছে না। সংকট উত্তরণে সর্বশেষ গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যাংক মালিকদের বৈঠকে দুর্বল ব্যাংক একীভূত করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

এটা আগামী বছর থেকে কার্যকর করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ২০২২ সালের ১২ জুলাই আব্দুর রউফ তালুকদার গভর্নর হিসাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যোগ দিয়েই দুর্বল ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে তদারকির উদ্যোগ নেন। ওই বছরের ৩ আগস্ট এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানিয়েছিলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ১০টি দুর্বল ব্যাংককে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণের নির্দেশনা দেন তিনি। কিন্তু গত দেড় বছরে এই ১০ ব্যাংকের অবস্থারও উন্নতি হয়নি। এসব ব্যাংকের অধিকাংশের অবস্থানই রেড জোনে।

নিয়মনীতি পরিপালনে ঘাটতি, ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি, পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্বহীনতা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের শক্ত অবস্থান না নেওয়ার কারণে দেশে দুর্বল ব্যাংকের সংখ্যা বাড়ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

বর্তমানে দেশে তফসিলি ব্যাংকের সংখ্যা ৬১টি। তবে আলোচ্য প্রতিবেদনে ৫৪টি ব্যাংকের তথ্য নেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুন থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত এই ৫৪টি ব্যাংকের ছয়টি ষান্মাষিক তথ্য বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আলোচ্য ছয়টি ষান্মাষিকে এই ৫৪ ব্যাংকের মধ্যে ৩৮টির অবস্থার অবনতি হয়েছে। আর ১৬টির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। বাকি ৭টির মধ্যে তিনটির আর্থিক অবস্থাও সংকটাপন্ন বলে প্রতিবেদনে ইঙ্গিত দেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুন থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্টাবিলিটি বিভাগ নিয়মিত ব্যাংকগুলোর এই স্বাস্থ্য সূচক ও হিটম্যাপ প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে। এই প্রতিবেদন তৈরিতে ক্যামেলস রেটিং ও ব্যাসেল-৩ আওতায় প্রস্তাবিত লিভারেজ অনুপাত বিবেচনায় নেওয়া হয়। ক্যামেলস রেটিং হচ্ছে ব্যাংকের সামগ্রিক স্বাস্থ্য পরিমাপের মানদণ্ড ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা, সম্পদের মান, ব্যবস্থাপনা, উপার্জন ক্ষমতা, তারল্য প্রবাহ ও বাজার ঝুঁকির প্রতি সংবেদনশীলতা- এই ৬ সূচকের অবস্থার ভিত্তিতে এই রেটিং নির্ধারিত হয়। অন্যদিকে ব্যাংকের টায়ার-১ মূলধন ও মোট সম্পদের অনুপাতকে লিভারেজ অনুপাত বলা হয়।

আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধানকল্পে ব্যাংকগুলোকে বিদ্যমান লিভারেজ অনুপাত ৩ শতাংশের সঙ্গে ২০২৩ সাল থেকে বার্ষিক শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ হারে ২০২৬ সালে মধ্যে এক শতাংশে উন্নতি করার নির্দেশনা রয়েছে।
তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গবেষণার জন্য দুর্বল ও সবল ব্যাংকের এই তালিকা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্ট ব্যাংকগুলোর ছয়টি কম্পোনেন্ট নিয়ে এ তালিকা করে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ছয়টি কম্পোনেন্ট নিয়ে দুর্বল-সবল ব্যাংকের তালিকা করেছে। এটা আমাদের নিজস্ব গবেষণার জন্য করা হয়েছে। গণমাধ্যমে প্রকাশের জন্য এ রেটিং করা হয়নি। এছাড়া কোন ব্যাংক দুর্বল এটাতো জানা। মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সব প্রতিবেদন জনগণের জন্য করা হয় না। বেশ কিছু প্রতিবেদন জাতীয় স্বার্থে গোপন রাখতে হয়। ব্যাংকগুলোর ওপর ক্যামেলস রেটিং কখনো পাবলিক হওয়ার জন্য নয়, এটা গোপনীয়; বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট বিভিন্ন কম্পোনেন্ট নিয়ে এসেসমেন্ট করে।

ফাইন্যান্সিয়াল রিক্স ম্যানেজমেন্টের জন্য করা হয়, এটা প্রকৃত হেলথ ইনডিকেটর নয়। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোকে শ্রেণিকরণ করতে একটা পিসিএ ফ্রেমওয়ার্ক করেছি। যেখানে চারটি ক্যাটাগরিতে ব্যাংকগুলোকে মূল্যায়ন করা হবে। চলতি বছরের ব্যালেন্স শিটের ওপর ভিত্তি করে এটা করা হবে। যেটা কার্যকর হবে ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে।

একীভূত নিয়ে তিনি বলেন, কোনো ব্যাংক চাইলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নিজস্ব পছন্দের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত হতে পারে। কিন্তু ডিসেম্বরের পর কোনো ব্যাংকের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া হবে না। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো দুর্বল ব্যাংককে অপর সবল ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেবে। এতে দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংক হতে পারে, আবার সবল ব্যাংক আরও সবল ব্যাংক হতে পারে। এছাড়া আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমানতকারীদের সুরক্ষা দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

Latest

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore