Friday 17 May, 2024

For Advertisement

শেয়ার বাজারে বড় দর পতন

22 January, 2024 10:59:25

ফ্লোরপ্রাইস’ তুলে নেওয়ার পর গতকাল রবিবার দেশের শেয়ার বাজারে মূল্যসূচকের বড় পতন হয়েছে। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯৬ পয়েন্টের বেশি। তবে লেনদেনের শুরুতে প্রধান সূচকটি ২৪০ পয়েন্ট কমে যায়। তাই শেষ পর্যন্ত কিছুটা হলেও বড় ধাক্কা সামলে উঠে লেনদেন শেষ হয়েছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, লেনদেনের শুরুতে কিছু বিনিয়োগকারী আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করেছেন। ফলে বাজারে সূচকের বড় পতন হয়। কিন্তু পরে আবার বিক্রয় চাপ কমে আসে। তারা বলেছেন, ফ্লোরপ্রাইস উঠে যাওয়ার পর কোনো কোনো ভালো শেয়ারের দর গতকাল বেড়েছে। যা বাজারের জন্য ইতিবাচক। বাজারের এ অবস্থায় বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় দেড় বছর পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ফ্লোরপ্রাইস ( শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্য স্তর) তুলে নিয়েছে। শেয়ার বাজারের সূচকে প্রভাব ফেলে এমন ৩৫টি কোম্পানি ছাড়া বাকি সব শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ওপর থেকে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়ার পর গতকাল প্রথম লেনদেনে শেয়ার বাজারে সূচকের বড় পতন হয়। বিনিয়োগকারীরা অনেকে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি করেন। এতে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৯৬.৫০ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ২৪০ পয়েন্টে নেমে আসে। এছাড়া, ডিএসইএস বা শরিয়াহ সূচক ১৪ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৩৭৪ পয়েন্টে অবস্থান করে। তবে ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএস-৩০ সূচক ৭ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১৩৭ পয়েন্টে উঠেছে। এদিন এই বাজারে ৫৮৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ডিএসইতে লেনদেনকৃত ৩৮৬টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ইউনিটের মধ্যে ২৯৬টির দরই কমেছে। দর বেড়েছে মাত্র ৫৪টির। অপর বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৪৭৬ পয়েন্ট।

বাজারের বর্তমান অবস্থায় করণীয় নির্ধারণে গতকাল সকালে বৈঠক করেছে শীর্ষ ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম। ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমানের সভাপতিত্বে বৈঠকে দেশের ৩০টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সিইও অংশ নেন।

এ প্রসঙ্গে ছায়েদুর রহমান ইত্তেফাককে বলেন, বৈঠকে ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এছাড়া, ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি করা হবে না। তিনি বলেন, ফ্লোরপ্রাইস তোলার পর বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। তবে আমরা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় আছি। ছায়েদুর রহমান বলেন, করোনার পর ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেওয়ার পরও এ অবস্থা হয়েছিল। কিন্তু বাজার খুব তাড়াতাড়িই ঘুরে দাঁড়িয়েছিল।

প্রাইম ব্যাংক সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মনিরুজ্জামান ইত্তেফাককে বলেন, গতকাল লেনদেনের শুরুতে আতঙ্কিত হয়ে কেউ কেউ শেয়ার বিক্রি করলেও পরে বাজার অনেকটাই স্বাভাবিক হয়েছে আমি বলব। তিনি বলেন, মুক্তবাজার অর্থনীতিতে এভাবে যায় না। তিনি বিনিয়োগকারীদের ফান্ডামেন্টাল ভ্যালু আছে, এমন ভালো স্টকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।

একই আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেছেন, ফ্লোরপ্রাইস তুলে দেওয়ায় দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য ভালো হয়েছে। খুব শিগগির বাজার স্থিতিশীল হবে বলে আমি মনে করি।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেছেন, দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোরপ্রাইস থাকার কারণে বাজারে লেনদেন একদম কমে গিয়েছিল। এতে ৮০ শতাংশ ব্রোকারেজ হাউজ তাদের পরিচালন ব্যয় তুলতে পারছিল না। ক্ষতির মুখে পড়েছিল শেয়ারবাজার। তিনি বলেন, মার্কেটকে মার্কেটের মতো চলতে দিতে হবে।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, বাজারের সব পক্ষের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেওয়ার পর বাজারে কেমন ফোর্স সেল হতে পারে তার একটা ধারণা করেছিলাম।

তিনি বলেন, বাজারে যাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব না পরে সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থার পক্ষ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আগেই আলোচনা করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীরা আশ্বস্ত করেছে, তারা বাজারে বিনিয়োগ করবে। সরকারি ব্যাংকগুলোকেও বিনিয়োগ বাড়াতে বলা হয়েছে। পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড (সিএমএসএফ) ১০০ কোটি টাকা ঋণ দেবে। প্রয়োজনে এটা ২০০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হবে। বিএসইসি মনে করছে, সামনে বাজারে বিনিয়োগ আরও বাড়বে। বাজার খুব দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে আশা করছি।

উল্লেখ্য, করোনা মহামারি ও পরবর্তীতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শেয়ার বাজারে পতন ঠেকাতে গত চার বছরে কয়েক দফায় ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। প্রথমবার ২০২০ সালে মার্চে ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করলেও তুলে নেওয়া হয় ২০২১ সালের জুলাইয়ে। এরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব ঠেকাতে ২০২২ সালের জুলাইয়ে আবারও ফ্লোরপ্রাইস আরোপ করা হয়। কিন্তু শেয়ারবাজারে লেনদেন কমে যাওয়ায় বাজার-সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের সমালোচনার মুখে প্রায় দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার বাজার থেকে ফ্লোরপ্রাইস তুলে নেয় বিএসইসি।

Latest

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore