ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

এলসি ৩৭% কমলেও সংকট মেটেনি

26 April 2023, 11:16:16

ডলার সংকট মোকাবিলায় আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে এলসি খোলা কমেছে গড়ে ৩৭ শতাংশ। এতে আমদানি কমিয়ে ডলার কিছুটা সাশ্রয় করা সম্ভব হলেও ভোক্তার ভোগান্তি বেড়েছে।

একদিকে ডলারের দাম বেড়েছে, ফলে পণ্য আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধি এবং ভোগ্যপণ্যসহ শিল্পপণ্যের আমদানি কমেছে। ফলে দেশের বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। এতে একদিকে মূল্যস্ফীতির হার হয়েছে লাগামহীন, অন্যদিকে ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ভোক্তার এই ভোগান্তির মধ্যেও আমদানি নিয়ন্ত্রণ করে ডলার সংকটের সমাধান করা সম্ভব হয়নি। এ সংকট বরং আরও দীর্ঘমেয়াদি রূপ ধারণ করছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডলার সংকট শুরু হয়। মে থেকে তা প্রকট আকার ধারণ করে। মার্চ থেকে আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়। মে মাসে তা বাড়ানো হয়। জুনে আরও কঠোর করা হয়। জুলাই থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করে। অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া ব্যাংকগুলো এলসি খোলা বন্ধ করে দেয়। আগস্ট থেকে ডলারের সংস্থান ছাড়া এলসি খোলা প্রায় বন্ধই হয়ে যায়। গত রোজার পণ্য আমদানির জন্য জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছুটা ডলারের জোগান বাড়ায়। যে কারণে ওই সময়ের পর থেকে এলসি খোলার মাত্রা কিছুটা বেড়েছে।

এদিকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করেও রিজার্ভ ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। উলটো কমে যাচ্ছে। ২০২১ সালের আগস্টে রিজার্ভ সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৮০৬ কোটি ডলারে উঠেছিল। এরপর থেকে তা কমতে থাকে। এখনো কমার ধারা অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১১৮ কোটি ডলার।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশ আমদানিনির্ভর। রপ্তানি যেটুকু হয়, এর পেছনেও ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। এছাড়া ভোগ্য ও বিলাসীপণ্য তো আছেই। আমদানির বিকল্প পণ্য দেশে তৈরির উদ্যোগ খুব বেশি সুফল হয়নি। এখন আমদানির বিকল্প পণ্য উৎপাদনের দিকে নজর দিতে হবে। তৈরি পোশাক দিয়ে হয়তো ব্যাপক কর্মসংস্থান হচ্ছে; কিন্তু অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। কেননা পোশাক রপ্তানির বিপরীতে তুলা, কাপড়, অন্যান্য উপকরণ মিলে অনেক আমদানি করতে হয়। বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল কিছুটা দেশে তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। খাদ্যপণ্যে স্বয়ংস্পূর্ণতা অর্জন করাটা এখন জরুরি। এজন্য কৃষি ও শিল্প দুই খাতেই জোর দিতে হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে এলসি খোলা হয়েছিল ৬৩২ কোটি ডলার। আগস্টে তা বেড়ে ৬৫২ কোটি ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে ৬৫৪ কোটি ডলারে ওঠে। অর্থাৎ জুলাই থেকে আগস্ট-প্রতিমাসে গড়ে এলসি খোলা হয়েছিল ৬০০ কোটি ডলারের বেশি করে। ডলার সংকট মোকাবিলায় নিয়ন্ত্রণ আরও কঠোর করার পর অক্টোবর থেকে এলসি খোলা কমে যায়। অক্টোবরে এলসি খোলা কমে ৫২৬ কোটি ডলারে নামে। নভেম্বরে আরও কমে ৪৭৪ কোটি ডলার হয়। সাম্প্রতিক সময়ে নভেম্বরেই এলসি খোলা সবচেয়ে বেশি কমে। ডিসেম্বরে আবার বেড়ে ৫৪৫ কোটি ডলারে ওঠে। জানুয়ারিতে আরও বেড়ে ৫৬৪ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে আরও বেড়ে ৫৬৯ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। ডিসেম্বর থেকে রোজানির্ভর পণ্যের এলসি খোলার মাত্রা বাড়ে। যে কারণে এলসি খোলাও বাড়ে। এ সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংকও রিজার্ভ থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ডলারের জোগান দেয়। গত মার্চে এলসি খোলা আবার কমে ৫২১ কোটি ডলারে নেমে যায়। গত ডিসেম্বর থেকেই এলসি খোলা আবার ৫০০ কোটি ডলারের ওপরে অবস্থান করে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। ২০২২ সালের মার্চে এলসি খোলা হয়েছিল ৯৫১ কোটি ডলারের, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। ওই সময়ের তুলনায় গত মার্চে এলসি খোলা কমেছে প্রায় ৪৬ শতাংশ।

সূত্র জানায়, গত বছরের ২৪ ফেব্র“য়ারি রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এতে বাড়ে এলসি খোলাও। গত বছরের জুলাই থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম কমতে শুরু করেছে, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। কিন্তু এখনো গত বছরের ফেব্র“য়ারির আগের পর্যায়ে কমেনি। যে কারণে এখনো আমদানি ব্যয় বেশি। এর মধ্যে ডলারের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরও বেশি। এতেও পণ্যের দাম বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, গত অর্থবছরের জুলাইয়ে ৫১৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। আগস্টে তা বেড়ে ৭২৭ কোটি ডলারে ওঠে। সেপ্টেম্বরে আরও বেড়ে ৮০৫ কোটি ডলারে ওঠে। অক্টোবরে আবার সামান্য কমে ৭৪৮ কোটি ডলারে নামে। নভেম্বরে আবার বেড়ে ৮৪১ কোটি ডলার হয়। ডিসেম্বরে সামান্য কমে ৮১৬ কোটি, জানুয়ারিতে আবার বেড়ে ৮৪৯ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। অর্থাৎ সেপ্টেম্বর থেকে জানুয়ারি-টানা পাঁচ মাস এলসি খোলা হয় প্রতিমাসে গড়ে ৮০০ কোটি ডলারের ওপরে। করোনার সংক্রমণের পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। একই সঙ্গে বাড়ে দামও। কারণ, করোনার সময় আমদানি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল।

গত অর্থবছরের ফেব্র“য়ারিতে এলসি খোলা কমে ৭৩৪ কোটি ডলারে নেমে যায়। ফেব্র“য়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করলে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়ে যায়। ফলে মার্চে সর্বোচ্চ এলসি খোলা বেড়ে ৯৫১ কোটি ডলারে ওঠে। এরপর থেকে আমদানি নিয়ন্ত্রণ শুরু করায় এবং পণ্যের সরবরাহ সংকট ও দাম বাড়ার কারণে এলসি খোলার প্রবণতা কমে যায়। যে কারণে গত অর্থবছরের এপ্রিলে এলসি খোলা হয় ৮৪১ কোটি ডলারের। মে মাসে আরও কমে ৬৯৬ কোটি ডলার এবং জুনে ৭০২ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়।

প্রতিবেদন থেকে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত ৫ হাজার ১৩৭ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় এলসি খোলা কমেছে ২৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের ওই সময়ে ভোগ্যপণ্যের ১৬ শতাংশ, শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামালের ৩১ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামালের ৩১ শতাংশ, শিল্পের যন্ত্রপাতির ৫৬ শতাংশ, বিবিধ শিল্পের যন্ত্রপাতি ৪৫ শতাংশ এবং অন্যান্য খাতে ১৯ শতাংশ এলসি খোলা কমেছে। তবে পেট্রোলিয়াম পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। আন্তর্জাতিক বাজারে এর দাম বাড়ার কারণেই বেশি দাম দিয়ে কম পণ্য আমদানি করতে হচ্ছে। যে কারণে বিদ্যুৎ খাতে জ্বালানি তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। গড়ে প্রতিমাসে এলসি খোলা কমেছে ৩৭ শতাংশ। এরপরও ডলার সংকট মেটেনি। কারণ, এখন বৈদেশিক ঋণ শোধ করতে হচ্ছে বেশি। এছাড়া রপ্তানি আয় কমে গেছে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: