ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

খেজুরের বাড়তি দাম: নেপথ্যে আমদানিকারক সিন্ডিকেট

29 March 2023, 1:57:31

রোজা ঘিরে পর্যাপ্ত খেজুর আমদানি করা হয়েছে। সরবরাহব্যবস্থা ঠিক থাকায় জোগানও পর্যাপ্ত। তবে খেজুর ব্যবসায় বাড়তি মুনাফা করতে নীরবে কারসাজি করা হয়েছে। নজরদারির অভাবে আমদানিকারকরা সিন্ডিকেট করে বাড়িয়েছে দাম।

দুই মাসের ব্যবধানে চক্রের সদস্যরা মোকাম পর্যায়ে খেজুরের দাম প্যাকেটপ্রতি (৫ কেজি) সর্বোচ্চ ৮০০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করেছে। ফলে দেশে পর্যাপ্ত মজুতের পরও খুচরা বাজারে রোজা ঘিরে ভোক্তাকে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ট্রেড ট্যারিফ কমিশন সূত্র জানায়, সারা দেশে বছরে খেজুরের চাহিদা থাকে ১ লাখ মেট্রিক টন। ফল আমদানিকারক ব্যবসায়ী সমিতির মতে, রোজার মাসে খেজুরের চাহিদা ৪০ হাজার মেট্রিক টন। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে জানা যায়, রোজা ঘিরে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে ৪০ হাজার মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে।

যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা যায়, রাজধানীর পাইকারি ফলের আড়ত বাদামতলীর খেজুরের আড়তে এক মাসের ব্যবধানে ৫ কেজি প্যাকেটের মরিয়ম প্রিমিয়াম খেজুরের দাম ৫০০ টাকা বাড়িয়ে ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মাবরুর খেজুর প্রতি প্যাকেটে ৫০০-৫৫০ টাকা দাম বাড়িয়ে ৩৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বড় আকারের ম্যাডজুল খেজুরের পাঁচ কেজির প্যাকেটে মাসের ব্যবধানে ৫০০ দাম বাড়ানোর পর ৬০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছয় কেজি ওজনের আজোয়া খেজুরের দাম ৮০০ টাকা বাড়িয়ে ৬২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাবাস ক্রাউন খেজুরে পাঁচ কেজির প্যাকেটে মূল্য বাড়ানো হয়েছে ৮০০ টাকা। বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকা।

রাজধানীর সর্ববৃহৎ ফলের পাইকারি আড়তের পাইকারি একাধিক বিক্রেতা যুগান্তরকে অভিযোগ করে বলেছেন, বাজারে এবার চাহিদার তুলনায় খেজুরের মজুত পর্যাপ্ত। রোজা ঘিরে খেজুরের চাহিদাকে পুঁজি করে একশ্রেণির আমদানিকারক, কমিশন এজেন্টরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।

তাদের যুক্তি, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খোলার জটিলতা ও পরিবহণ ব্যয় গত বছরের তুলনায় বেশি। কিন্তু অনেক আমদানিকারক উচ্চমূল্যের খেজুর শুল্ক ফাঁকি দিতে কম দাম দেখিয়ে আমদানি করেছে। কিন্তু বাজারে বিক্রি করছে চার থেকে পাঁচ গুণ বেশি দামে। তারা জানান, দেশে হাতেগোনা ৪০০ জন আমদানিকারক ফল আমদানি করে। এর মধ্যে খেজুর আনে ১০০ জন। আর এই গুটি কয়েক ব্যবসায়ীর হাতে ক্রেতারা জিম্মি। তারা চিহ্নিত, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। দাম বাড়লেই পাইকরি আড়তে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি পুরান ঢাকার বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, দেশে রমজানের সময়ই খেজুরের চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। প্রায় ৪০ হাজার টন। এবার এই পরিমাণই আমদানি হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরেও কোনো জট ছিল না।

সময়মতো জাহাজ ভিড়তে পেরেছে। ফলে বাজারে খেজুরের সংকট হবে না। তবে ডলারের দাম বাড়ায় মানভেদে খেজুর কেজিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, আগে ডলারপ্রতি বাংলাদেশি ৮৪-৮৫ টাকা পরিশোধ করতে হতো। এবার দিতে হচ্ছে ১০৮-১১০ টাকা।

পাশাপাশি ডলারের দাম বাড়ার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ২০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক, ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট, ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর আর ৪ শতাংশ অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট। এ কারণেই বেড়েছে খেজুরসহ সব ধরনের ফলের দাম।

রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সৌদি আরবের প্রতি কেজি মেডজুল খেজুর বিক্রি হয়েছে ১২০০ টাকা কেজি। গত বছর একই সময় ৯০০-৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সাধারণ মেডজুল এবার বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার টাকা, যা আগে ৮০০ টাকা ছিল।

মরিয়ম খেজুর বিক্রি হয়েছে ৯০০-৯৫০ টাকা কেজি। গত বছর একই সময় ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বড় আকারের বরই খেজুর প্রতি কেজি ৪৩০ টাকা, যা আগে ৩০০ টাকা ছিল।

পল্টন মোড়ে খেজুর কিনতে আসা ইসমাইল হোসেন বলেন, এবার খেজুরের অনেক দাম। রোজা রেখে ইফতারে খেজুর না থাকলে হয় না। কিন্তু এবার এই প্রয়োজনীয় পণ্যটির দাম বেশি হওয়ায় কিনতে পারছি না। সব জায়গায় কমবেশি অভিযান হচ্ছে; কিন্তু খেজুরের বাজারে অভিযান নেই। যার কারণে যে যেভাবে পারছে পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে রোজায় ব্যবহৃত পণ্যের দিকে তদারকি সংস্থার বিশেষ নজর দিতে হবে। খেজুর আমদানি করে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী। রোজার আগে এলসির পরিমাণ, কত টাকায় আমদানি এবং বিক্রি কত টাকায় করা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখলেই হয়।

জানতে চাইলে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, মরিটরিংয়ের মাধ্যমে অন্যান্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আসছে। খেজুরের দামও নিয়ন্ত্রণে আসবে। অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তদারকি করা হবে। আমদানি মূল্য যাচাই করা হবে। এ সময় পরিবহণ খরচসহ যৌক্তিক বিক্রয় মূল্য না পেলে কঠোর শাস্তির আওতায় আনা হবে। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এদিকে ২৫ মার্চ চট্টগ্রামের বিআরটিসি ফলমুন্ডি আড়তে জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্তের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানের সময় খেজুর আমদানি থেকে শুরু করে পাইকারি বাজার ও কমিশন এজেন্টদের ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ে। দেখা যায়, জানুয়ারি থেকে মার্চ বাংলাদেশে ৪০ হাজার ২৪ মেট্রিক টন খেজুর আমদানি হয়েছে। এগুলোর গড় মূল্য কেজিতে ৮৯ টাকা ৩৬ পয়সা।

অথচ পাইকারি বাজারে বিভিন্ন জাতের খেজুর চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। রাজস্ব ফাঁকি দিতে মিথ্যা ঘোষণায় নিম্নমানের দেখিয়ে উন্নত জাতের খেজুর আমদানি করে দেশের বাজারে তা তিন-চারগুণ দামে বিক্রি করেছে। এতে ওই সময় চট্টগ্রামে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছেন জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: