Saturday 18 May, 2024

For Advertisement

ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে সঞ্চয়পত্রের দেনা শোধ

28 December, 2022 11:19:37

কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বা ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্রের ঋণ পরিশোধ করছে। ছাপানো টাকায় ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও সঞ্চয়পত্র থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করায় ব্যাংকে তারল্যের জোগান বাড়ছে। ছাপানো টাকায় তারল্যের জোগান বাড়ানোর কারণে মূল্যস্ফীতির চাপও বেড়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে থেকে ১৭ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজার কোটি টাকা।

ADVERTISEMENT

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, নন ব্যাংকিং খাত বা সঞ্চয়পত্র থেকে সরকার গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ঋণ নিয়েছিল ৪৪ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে এ খাতে ঋণ কম নিয়েছে ১৭ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছরের ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বর এই ১৫ দিনে নন ব্যাংকিং খাত থেকে সরকারের ঋণে ঘাটতি হয়েছে ৫৩৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়ে নতুন সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে যে অর্থ সংগ্রহ করেছে তারচেয়ে ৬৩২ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে। শুধু অক্টোবরেই সঞ্চয়পত্রের বিক্রির চেয়ে ৯৬৩ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছে। ফলে এ খাতে সরকারের ঋণে বড় ঘাটতির সৃষ্টি হয়েছে। ওই ঘাটতির অর্থ পরিশোধ করা হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের টাকা থেকে।

সূত্র জানায়, এর বাইরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিভিন্ন তহবিলের মাধ্যমেও বাণিজ্যিক ব্যাংকে তরল্যের জোগান বাড়ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কম সুদে বিভিন্ন খাতে ঋণ দিতে বেশ কয়েকটি তহবিল গঠন করেছে। ওইসব তহবিল থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ঋণ দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের একটি অংশ পরিশোধ করছে। এভাবেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে টাকার প্রবাহ বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের টাকাকে ‘হাইপাওয়ার্ড মানি’ বলা হয়। যা বাজারে এসে টাকার প্রবাহ বাড়িয়ে দেয়।

এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় যেমন বাড়ছে, তেমনি দেশের ভেতরেও সামাজিক নিরাপত্তাসহ অন্যান্য খাতে সরকারকে ব্যয় বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু যেভাবে ব্যয় বেড়েছে সেভাবে আয় বাড়েনি। এতে করে সরকারের ঋণ বাড়ছে। এখন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে ব্যাংকে তারল্যের চাপ বাড়বে। যেহেতু আমানত প্রবাহ কম। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের জোগান বাড়ানো হয়েছে। এটি সাময়িক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ কমে যাবে।

সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সরকারের বিভিন্ন হিসাব রয়েছে। কোনো হিসাবে অর্থের ঘাটতি হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জোগান দেওয়া হয়। যাতে সরকারের কোনো চেক বাতিল না হয়। এভাবে ১০০ কোটি টাকার বেশি জোগান দেওয়া হলে এর বিপরীতে একটি ট্রেজারি বিল ইস্যু করে তা বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বিক্রি করা হতো। এই প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্থানান্তর হয়ে যেত। এখন ব্যাংকে তারল্য সংকটের কারণে ট্রেজারি বিল আর বাণিজ্যিক ব্যাংকে স্থানান্তর করা হচ্ছে না। ফলে ওই ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবেই থেকে যাচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী সরকারের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার ৮৮৪ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ছিল ১৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ ৩ লাখ ২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ে ঋণ ছিল ২ লাখ ২১ হাজার ৭৫১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ গ্রহণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৯ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে আগে থেকে নেওয়া ঋণ ৬ হাজার ৭৩২ কোটি টাকা পরিশোধ করেছিল। নতুন কোনো ঋণ নেয়নি।

চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের নিট ঋণ গ্রহণের পরিমাণ ৩২ হাজার কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ ঋণের স্থিতি ছিল ১৯ হাজার ৬৩৬ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ঋণ বেড়েছে ১২ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। বৃদ্ধির হার প্রায় ৬৩ শতাংশ।

শুধু ১ থেকে ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নেওয়া হয়েছে ৫ হাজার ৭১১ কোটি টাকা। বাাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক মিলে ৯৩৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছিল ৬ হাজার কোটি টাকা। বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নিয়েছিল ১ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা।

অর্থাৎ গত অর্থবছরের ওই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করেছিল। এতে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ কমে গিয়ে মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। চলতি অর্থবছরে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক ও নন-ব্যাংকিং খাতের ঋণ পরিশোধ করছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাড়তি ঋণের কারণে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে যাচ্ছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে।

সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ার কারণে দেশের ভেতরেও পণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির হারও বাড়ছে। আগস্টে এ হার সাড়ে ৯ শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। নভেম্বরে তা কমে ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে।

এদিকে সরকারের ব্যয়ের তুলনায় আয় বাড়ছে না। এছাড়া সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার কারণেও নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নিচ্ছে কম। ফলে দুদিক থেকেই সরকার ঘাটতিতে পড়েছে। একদিকে আয়ের ঘাটতি ও অন্যদিকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে নন-ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার ঘাটতির কারণে সরকারের ঋণ নির্ভরতা বেড়েছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকে আমানত প্রবাহ অর্ধেক কমে যাওয়ায় তারল্য সংকট বেড়েছে। এ কারণে সরকার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়া কমিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বেশি ঋণ নিচ্ছে।

Latest

For Advertisement

সম্পাদক ও প্রকাশক:- এ এফ এম রিজাউর রহমান (রুমেল), এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট  
  • প্রধান উপদেষ্টা: মোঃ আব্দুল্লাহ আবু, এডভোকেট- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
সহযোগী-সম্পাদক:
    • গোলাম কিবরিয়া খান (রাজা),
সহ -সম্পাদক:
    • হাসিনা রহমান শিপন,
নিউজ রুম ইনচার্জ :
    রাশিকুর রহমান রিফাত
© সকল স্বত্ব প্রতিচ্ছবি ডটকম ২০১৫ - ২০২২ অফিস: ৭২/২ উত্তর মুগদাপাড়া, ঢাকা ই-মেইল: dailyprotichhobi@gmail.com | মোবাইল: ০১৮১৮০৯৩১৩৭ ফোন:+৮৮০২৭২৭৭১৪৭

Developed by WebsXplore