ইন্টারনেট
হোম / অর্থনীতি / বিস্তারিত
ADS

গ্যাস-বিদুৎ সংকটে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল ঝুঁকিতে

23 October 2022, 3:03:30

দেশের যেসব মিল ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মাধ্যমে চালু আছে, সেগুলো গত কয়েক মাস ধরে গড়ে ১২ ঘন্টা বন্ধ থাকে। গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের কারণে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে টেক্সটাইল খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন।

শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে টেক্সটাইল খাতে গ্যাস ও বিদ্যুতের সংকট নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।বিটিএমএ সভাপতি বলেন, গ্যাস-বিদ্যুত সংকটের কারণে ৬০ শতাংশ বস্ত্রকল ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। দ্রুত সংকট সমাধান করে নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ করা না হলে অনেক শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যাবে। চাকরি হারাবেন শ্রমিকেরা। ব্যাংকও তাদের পুঁজি হারাবে।

তিনি বলেন, ‘জ্বালানির সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো যদি দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিত, তাহলে আজকে এ অবস্থা তৈরি হতো না। পেট্রোবাংলা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, অক্টোবরের শুরু থেকে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। নভেম্বরে আরও ভালো থাকবে। ডিসেম্বরে কোনো সংকট থাকবে না। কিন্তু উন্নতি তো দূরে, অক্টোবরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আমাদের শঙ্কা, আগামী দুই মাসে গ্যাসের সংকট আরও বাড়বে।’

তিনি বলেন, আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্নও যে বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতটি বিভিন্ন ধরণের সমস্যার মধ্যে ছিল।

মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্ব পরিস্থিতির ব্যাপক পরিবর্তনের কারণে আমাদের প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতটি একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে। আমাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে জ্বালানি তথা গ্যাস সংকট। যার কারণে আমাদের মিলগুলোর উৎপাদন দীর্ঘদিন যাবত কার্যত বন্ধ রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এই সমস্যা সমাধানের জন্য কয়েক দফা বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, জ্বালানী উপদেষ্টাসহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের স্মরণাপন্ন হয়ে আমারা অবস্থান তুলে ধরেছি। তারপরও এর কোনো সমাধান নেই, বরং সমস্যাটি আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।বিটিএমএ সভাপতি বলেন, শিল্প উৎপাদনের মূল নিয়ামক হচ্ছে জ্বালানি। অথচ গ্যাস ও বিদ্যুতের অভাবে আমাদের টেক্সটাইল মিলগুলো দীর্ঘদিন যাবত তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ৩৫-৪০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করতে পারছে না। ছোট ও মাঝারি মানের ফেব্রিক মিলগুলোর অবস্থা আরো খারাপ । সিরাজগঞ্জ, পাবনা, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, পলাশ, কালিবাড়ী, মাধবদী ইত্যাদি এলাকায় অনেক ছোটখাটো মিল রয়েছে। এই মিলগুলি পরিচালিত হয় সাধারণত বিদ্যুৎ দিয়ে। ফলে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে মিলগুলোর যে আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে তা পূরণ করার কোনো বিকল্প নেই।

তিনি আরও বলেন, ডায়িং মিলগুলির সমস্যাটি অত্যন্ত প্রকট। লোড শেডিংয়ের কারণে মিলগুলোর মূল্যবান রং এবং রসায়ন নষ্ট হচ্ছে। একই সাথে সাইজিং মেশিন বন্ধ থাকায় সুতাও নষ্ট হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত মিলগুলিকে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে অনেকে ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা করছেন।

প্রাইমারি টেক্সটাইল খাতে বর্তমান বিনিয়োগ দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মধ্যে ৭০ শতাংশই বিভিন্ন ব্যাংকের বিনিয়োগ। মিলগুলির উৎপাদন কমে যাওয়ায় ক্রমাগত লোকসানের কারণে উদ্যোক্তারা ব্যাংক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছেন। অনেক শিল্প ইতোমধ্যে রুগ্ন হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। অপর দিকে টেক্সটাইল খাতে ২০২৫ সালের মধ্যে আরো ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ হতে যাচ্ছে। যদি জ্বালানির নিশ্চয়তা না পাওয়া যায়, তাহলে এই বিনিয়োগ নিশ্চিতভাবে অপবিনিয়োগ হতে বাধ্য।

যারা ব্যাংক থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) টাকা নিয়ে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি করেছে তারাও সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বিটিএমএ সভাপতি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের অবস্থান কঠোর। ফলে নির্ধারিত সময়ে উক্ত অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী মিলগুলি পরবর্তী সময়ে এই ঋণ পাওয়ার যোগ্যতা হারাবেন, যদিও এর জন্য আমরা বা মিল কর্তৃপক্ষ কোনোক্রমেই দায়ী নই।

তিনি বলেন, বিশ্বে নানাবিধ অস্থিরতার কারণে আমরা নানাবিধ চাপের মধ্যে রয়েছি। এর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী মন্দা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় জ্বালানির অভাবে যদি আমরা মিল নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে না পারি তাহলে ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে আমরা শংকিত।

আমাদের ক্যাপটিভ পাওয়ার জেনারেশনের মিলগুলো বার্ষিক ১৬৯.১ বিলিয়ন কিউবিক ফিট গ্যাস ব্যবহার করে। এর বিপরীতে গ্যাস ট্যারিফ হিসাবে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার মতো বিল পরিশোধ করে। উক্ত গ্যাস ব্যবহার এবং তার সাথে অন্যান্য ইনপুট ব্যবহারের মাধ্যমে মিলগুলি ২১.০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি সাশ্রয় করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, টেক্সটাইল খাতের মিলগুলোতে যদি গ্যাসের অব্যাহত সংকট চলতে থাকে তাহলে আমাদের মিলগুলো যে ২১ বিলিয়ন ডলার রিটেনশন করেছে তা বাধাগ্রস্থ হওয়ার পাশাপাশি সরকার ডলার ও জ্বালানি সংকট মোকাবিলার জন্য যে সাশ্রয় নীতি গ্রহণ করেছেন তা বাধাগ্রস্থ হতে বাধ্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিটিএমএ সহসভাপতি ফজলুল হক ও আব্দুল্লাহ আল মামুন, পরিচালক মোশাররফ হোসেন, আবদুল্লাহ জোবায়ের, সৈয়দ নুরুল ইসলাম, মোনালিসা মান্নান প্রমুখ।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: