ইন্টারনেট
হোম / সারা বাংলা / বিস্তারিত
ADS

মানসিক ভারসাম্যহীন নারীর যমজ সন্তান প্রসব, দায়িত্ব নিতে নারাজ স্বজনরা

7 September 2023, 11:11:03

যশোরে যমজ সন্তানের জন্ম দেওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন নারী মাহিনুরকে (৩৫) নিয়ে বিপাকে পড়েছে প্রশাসন। দুদিন অনুসন্ধানের পর তার স্বজনদের সন্ধান পাওয়া গেলেও তারা মাহিনুরের দায়িত্ব নিতে নারাজ। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় হাসপাতালে তিনি অসংলগ্ন আচরণ করছেন। ফলে প্রসূতি ও দুই নবজাতককে নিয়ে তারাও আছেন বিড়ম্বনায়। ফলে দু’একদিন অপেক্ষা করে আদালতের নির্দেশনা নিয়ে মা ও দুই নবজাতকের ব্যাপারে পদক্ষেপের কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ।

রোববার যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রাম ইউনিয়নের নতুন গ্রামের জামিরুল ইসলামের বিছালির (খড়) ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল নাম পরিচয়রহীন ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওইদিন সন্ধ্যায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। এরপর থেকে মা ও দুই নবজাতক যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে মা ও দুই নবজাতকের দেখভাল করা জেলা প্রতিবন্ধী বিষয়ক কর্মকর্তা মুনা আফরিণ জানান, বাঘারপাড়া থেকে মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি মা ও দুই নবজাতককে যশোর হাসপাতালে পাঠানোর পর এখানের তাদের চিকিৎসা চলছে। হাসপাতালের নার্স, আয়া, আনসার নারী সদস্য ছাড়াও কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী নারী শিশু দুটি ও মায়ের দেখাশোনা করছেন। প্রসূতি মা মাঝে মধ্যেই অসংলগ্ন আচরণ করছেন। এখন তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর বা নিরাপদ আশ্রয় দরকার।

এদিকে, রোববার ওই নারীকে যশোর হাসপাতালে আনার পর তার পরিচয় শনাক্তে তৎপরতা শুরু করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দুদিন পরে পিবিআই তার পরিচয় উদ্ধার করে।

জানা যায়, ওই নারীর নাম মোসাম্মৎ মাহিনুর। তিনি খুলনার তেরখাদা উপজেলার বারাসাত গ্রামের চান্দু মিয়ার মেয়ে। এরপর পিবিআই ওই ঠিকানার সূত্র ধরে বারাসাত গ্রামে যোগাযোগ করে। সেখানে মাহিনুরের এক চাচার সন্ধান পাওয়া যায়। তাদের মাধ্যমে জানা যায়, মাহিনুরের মা জাকিয়া বেগম ও ছোটভাই হাসিবুর রহমান লিপ্টন নড়াইলের কালিয়া উপজেলার মাথাভাঙ্গা আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস করেন।

পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন জানিয়েছেন, পরিচয় ও ঠিকানা শনাক্তের পর তারা নড়াইলের কালিয়ায় ওই নারীর ছোটভাই হাসিবুরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। মাহিনুরের পরিচয় নিশ্চিত করলেও তারা মাহিনুর বা তার সন্তানের দায়িত্ব নিতে রাজী নন। এমনকি তারা যশোরে আসতেও রাজী হননি।

মাহিনুরের ছোট ভাই হাসিবুর রহমান লিপ্টন জানান, অনেক আগে তার বোন মাহিনুর নিজের পছন্দে শফিকুল ইসলাম নামে একজনকে বিয়ে করে ঢাকায় থাকতো। নিজের পছন্দে বিয়ে করায় তারা সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। এরপর তার দুটি ছেলে মেয়ে হয়। ওই সংসার ভেঙে গেলে দুই ছেলেমেয়ে রাকিব (১১) ও রাবেয়া (৩) নড়াইলে তাদের কাছে রয়েছে। আর মাহিনুর ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি করতো। দেড় বছর আগে সে নিখোঁজ হয়। আগে তার মাথায় কিছুটা সমস্যা ছিল। তার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকায় তারা কোনো খোঁজ খবর নেননি।

হাসিবুর রহমান লিপ্টন আরও জানান, প্রশাসন থেকে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। অভাবের সংসারে মাহিনুরের আগের দুই ছেলে মেয়ে রয়েছে। আর কোনো ছেলেমেয়ে বা মাহিনুরের দায়িত্ব তারা নিতে চান না। প্রশাসন যেটা ভালো মনে করবে তাই করার জন্য তিনি অনুরোধ জানিয়েছেন।

সমাজসেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক অসিত কুমার সাহা জানিয়েছেন, মাহিনুরের যে ভাইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে তিনি কোনো দায়িত্ব নিতে চান না। ফলে মাহিনুর ও তার দুই সন্তান নিয়ে আদালত, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ যশোরের উপ-পরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, যেহেতু মাহিনুরের মা ও ভাই তার কোনো দায়িত্ব নিতে আগ্রহী নন; এখন শিশু দুটির ব্যাপারে সিদ্ধান্তের জন্য জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডে মাধ্যমে আদালতের দ্বারস্থ হতে হবে। আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শিশু দুটির ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আর জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষে মাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ভবঘুরে আশ্রয় কেন্দ্র বা নিরাপদ কোনো আবাসে রাখার পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

ADS ADS

প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Comments: