শীতলক্ষ্যায় লঞ্চডুবি ৫ নারীর লাশ উদ্ধার
নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ ঘাট এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে কোস্টার ট্যাংকারের ধাক্কায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবির ঘটনায় গত রাত ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। সাঁতরে পাড়ে উঠতে পেরেছে অন্তত ২০ জন। আহত ১১ জনকে উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জ ভিক্টোরিয়া হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছে অনেক যাত্রী। গতকাল রবিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকের শীতলক্ষ্যার চর সৈয়দপুর এলাকার ব্রিজের কাছে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদা বারি গত রাতে জানান, ৩৫ থেকে ৪০ বছর বয়সী ওই পাঁচ নারীর লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকর্মীরা; তবে তাঁদের নাম-পরিচয় তাত্ক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। সাবিত আল হাসান নামের ডুবে যাওয়া লঞ্চটি মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিল। ঘটনা তদন্তে নৌ ট্রাফিক পুলিশের পরিচালক রফিকুল ইসলামকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যার পর থেকেই নদীর তীরে নিখোঁজ যাত্রীদের স্বজনরা ভিড় জমায়। তাদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির যাত্রীদের বেশির ভাগই ছিল মুন্সীগঞ্জের। তাই দুর্ঘটনার খবর পেয়ে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটেও ভিড় জমায় যাত্রীদের স্বজনরা।
এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে উদ্ধারকাজ শুরু করতে বিলম্ব হয়। গত রাত সাড়ে ৮টার দিকে বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া কমে এলে নদীতে নামে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল। রাত ১১টার দিকে ডুবে যাওয়া লঞ্চটির সন্ধান পেলেও রাত ১২টা পর্যন্ত উদ্ধার সম্ভব হয়নি।
নারায়ণগঞ্জ বিআইডাব্লিউটিএর ট্রাফিক পরিদর্শক বাবু লাল জানান, এমভি সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে মদনগঞ্জে নির্মাণাধীন তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর কাছাকাছি এলাকায় পৌঁছলে এসকে-৩ নামের একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দেয়। কার্গো জাহাজ লঞ্চটিকে ঠেলে ৫০ ফুট দূরে ব্রিজের নিচে নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে এটি কাত হয়ে ডুবে যায়।
দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চের যাত্রী মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা শ্রমিক আলম মিয়া বলেন, ‘আমি লঞ্চের ছাদের পেছনের দিকে ছিলাম। হঠাৎ দেখি একটি কার্গো জাহাজ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে আমাদের লঞ্চটিকে ভাসিয়ে ব্রিজের নিচে নিয়ে আসে। পরে লঞ্চটি ডুবে যায়। আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে উঠতে সক্ষম হই। লঞ্চে ৫০ থেকে ৬০ জন যাত্রী ছিল। তাদের মধ্যে ১৫ থেকে ২০ জন হয়তো সাঁতরে তীরে উঠতে পেরেছে।’
ঘটনাস্থল থেকে বন্দর থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে লঞ্চযাত্রী এক নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেছেন বলে জানতে পেরেছি। রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ১১ জনকে নদীর তীর থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজন চিকিৎসাধীন।’
মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে স্বজনের ভিড়
মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটির বেশির ভাগ যাত্রীই মুন্সীগঞ্জের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে সন্ধ্যা থেকেই স্বজনরা ভিড় জমায় মুন্সীগঞ্জ লঞ্চঘাটে। উদ্ধার হওয়া কিছু যাত্রী ট্রলারসহ নানাভাবে মুন্সীগঞ্জে এসে পৌঁছেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লঞ্চঘাটে একটি ক্যাম্প খোলা হয়েছে।
প্রতিছবি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
Comments: